পেশায় তিনি স্কুলের রাধুনী। মুর্শিদাবাদের ফরাক্কার ৪০ নং নয়নসুখ শ্রীমন্ত পাল প্রাথমিক বিদ্যালয়ের। প্রায় ৩৬০ জন ছাত্র-ছাত্রী প্রতিদিন অপেক্ষা করেন দুপুর হলেই তাদের সকলের আদরের বিশাখা ‘পিসির” হাতে তৈরী খাবার খাওয়ার জন্য। কিন্তু স্কুলের রান্নার ‘পিসি’ বিশাখা পাল যে দারুন অঙ্কও শেখাতে পারেন এটা কারও জানা ছিল না।
গত বৃহস্পতিবার দিন যখন চতুর্থ শ্রেণীর ছাত্র ছাত্রীরা ঠিকমতো অঙ্ক করতে না পেরে স্কুল শিক্ষকের কাছে বকা খাচ্ছিলেন সেই সময় ছাত্র-ছাত্রীদেরকে অঙ্ক শেখাতে এগিয়ে আসেন বিশাখা পাল। আর সেই দৃশ্য নিজের মোবাইল ক্যামেরাতে তুলে নেন স্কুলের শিক্ষক পরেশ দাস। পরে নিজের ফেসবুকে আপলোড করে দেন রান্নার পিসির অঙ্ক শেখানোর ভিডিও। শুক্রবার সকাল থেকে নেট মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে বিশাখা পালের অঙ্ক শেখানোর দৃশ্য। আর এই দৃশ্য দেখে নেট নাগরিকরা প্রশংসায় ভরিয়ে দিচ্ছেন তাঁকে।
বিশাখা পাল বিগত বেশ কয়েক বছর ধরে ওই স্কুলের ‘মিড ডে মিল’ রান্নার কাজের সাথে যুক্ত। আর্থিক কারণে দশম শ্রেণীর বেশি পড়াশোনা করতে না পারার দুঃখ আজও তাঁর মনের মধ্যে রয়ে গেছে। তাই সময়-সুযোগ পেলেই রান্নার কাজের ফাঁকে তিনি দাঁড়িয়ে পারেন বিভিন্ন ক্লাসের দোরগোড়ায় আর শুনতে থাকেন শিক্ষকদের পড়ানো।
ওই স্কুলের শিক্ষক পরেশ দাস বলেন, “বৃহস্পতিবার আমি যখন চতুর্থ শ্রেণীর অঙ্কের ক্লাস নিছিলাম সেই সময় বেশ কয়েকজন ছাত্র ছাত্রী অঙ্কগুলো করতে পারছিল না। হঠাৎ ই রান্নার পিসি বিশাখা পাল আমাদের ঘরে ঢুকে আমার কাছ আবদার করে আমি কি বাচ্চাদের একটু ক্লাস করাবো। আমি তাকে নিরুৎসাহিত করতে চাইনি। চক ডাস্টার হাতে ধরিয়ে দিয়ে দেখতে চাইলাম তিনি কেমন অঙ্ক করান। আর নিজের মোবাইল ফোনে গোটা দৃশ্যটা তুলে রাখি।”
পরেশবাবু বলেন, ”আমাকে অবাক করে দিয়ে বিশাখাদেবী সবকটি অঙ্ক ঠিক করেন এবং তাঁর অনন্য ভঙ্গিতে অঙ্কগুলো শেখানো ছাত্রছাত্রীদেরও উৎসাহিত করে। তাই কিছুটা অন্যরকমভাবে পুরস্কৃত করার ভাবনা থেকে তাঁর অঙ্ক শেখানোর ভিডিও নিজের ফেসবুক পেজে তুলে দিই। আমি জানতাম না সেটি ভাইরাল হবে।”
লাজুক মুখে বিশাখা পাল বলেন, ”সংসার চালানোর জন্য আমি রান্নার কাজ করি কিন্তু পড়াশোনা করার অদম্য ইচ্ছা আজও মনে রয়ে গেছে। একসময়ের স্কুলের শিক্ষকদের কাছে যে অঙ্কগুলো শিখেছিলাম সেগুলোই কাল স্কুলের ছাত্র-ছাত্রীদের শিখিয়েছি। আমার শেখানো থেকে যদি ছাত্র-ছাত্রীরা লাভবান হয় তাহলে আমি নিজেকে গর্বিত মনে করবো।”
আরও পড়ুন : Firhad Hakim:প্লাস্টিকের ব্যবহার রুখতে পথে এবার মেয়র!