আমাদের প্রত্যেকের জীবনেই কর্মক্ষেত্র (Workplace) একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ জায়গা দখল করে রয়েছে। পেটের দায়ে আমাদের কাজ করেই খেতে হবে কিন্তু সেই কাজের জায়গায় যদি আমাদের মানসিক অশান্তির কারণ হয়? বর্তমানে কর্মক্ষেত্রের চাপ মানসিক স্বাস্থ্যের অবনতির অন্যতম কারণ। বিশ্বের প্রায় সব দেশের কর্মীরাই এই সমস্যার শিকার। মানসিক স্থিতি বজায় রেখে কাজ করে উপার্জন করা যেনো বর্তমান সময় একটা চ্যালেঞ্জের মতো হয়ে গেছে।
কাজের অতিরিক্ত চাপ, সময়ের বেশি কাজ করার প্রেসার, কর্মক্ষেত্রের পরিবেশের কারণে অনেকসময় মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। এর ফলে একদিকে যেমন কর্মীর কাজের প্রতি মনোযোগ, আগ্রহ, কাজ করার ইচ্ছা হ্রাস পায় তেমন অন্যদিকে তার ব্যক্তিগত জীবনেও এর যথেচ্ছ প্রভাব পড়ে। একটি কর্মক্ষেত্রে প্রত্যেক কর্মচারীর মানসিক স্বাস্থ্য ঠিক থাকা অত্যন্ত জরুরি। কারণ তাদের মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে নির্ভর করে আছে কর্মস্থলের উত্পাদনশীলতা, ভবিষ্যত ও কর্মপরিবেশ।
কর্মক্ষেত্রে অতিরিক্ত চাপ (Workplace Stress) বা নির্ধারিত সময়ের বেশি কাজ করা একজন কর্মচারীর মধ্যে উদ্বেগের সৃষ্টি করতে পারে। কারণ দিনের শেষে সকলেরই বাড়ি যাওয়ার ইচ্ছা প্রবলভাবে বেড়ে যায়। তাই নির্ধারিত সময়ের পরেও কাজ করা প্রত্যেকের কাছেই একটা শাস্তির মতো মনে হয়। এই উদ্বেগের কারণে ব্যক্তির কাজের প্রতি মনোযোগ কমে যায় এবং চাপের অনুভূতি তৈরি হয় যা মানসিক স্বাস্থ্যের ক্ষতি করে। এছাড়াও কর্মক্ষেত্রের চাপের কারণে মানুষের আত্মবিশ্বাসের অভাব ঘটতে পারে। দীর্ঘদিন এই চাপের কারণে অবসাদে ভুগতে থাকে অনেকেই। এমনকি পারিবারিক ও সামাজিক সম্পর্কের ওপরেও এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ে।
কর্মক্ষেত্রে মানসিক চাপ (Workplace Stress) কমাতে এই উপায়গুলি অবলম্বন করা যেতে পারে:
১. কাজের একটি সঠিক সময়সূচি তৈরি করুন এবং গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলো আগে সম্পন্ন করুন।
২. ছোট ছোট বিরতি নিন যাতে মানসিক চাপ কমানো যায়।
৩. স্বাস্থ্যকর খাবার খান ও পর্যাপ্ত পরিমাণে ঘুমান
৪. সহকর্মীদের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখুন
৫. চাপের মুহূর্তে শ্বাস-প্রশ্বাস নিয়ন্ত্রণের অনুশীলন করুন
৬. মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণ করা মুশকিল হলে মনোরোগ বিশেষজ্ঞের সাহায্য নিন
কর্মক্ষেত্রে চাপ সত্যিই বর্তমান জীবনে একটি পরিচিত সমস্যা। তবে এই চাপ কমানোর জন্য কর্মস্থলে একটি স্বাস্থ্যকর পরিবেশ অবশ্যই তৈরি করা প্রয়োজন। একজনের ওপর যাতে অতিরিক্ত চাপ না পড়ে সেদিকে লক্ষ্য রেখে সকলে মিলেমিশে কাজ করা দরকার। কাজের মাঝে বিরতি নেওয়া, নির্দিষ্ট সময়ের বাইরে কাজ না করা, সহকর্মীদের সাথে সুসম্পর্ক বজায় রাখা ও একে অপরের দিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেওয়ার মাধ্যমেই আমরা কর্মক্ষেত্রে তৈরি হওয়া মানসিক চাপের সাথে লড়াই করে একটি সুস্থ কাজের পরিবেশ গঠন করতে পারি।