উত্তপ্ত মুর্শিদাবাদে এখনও যাননি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।তা নিয়ে বিরোধীদের কুৎসার শেষ নেই।তার মাঝে বৃহস্পতিবারই মুর্শিদাবাদে যাচ্ছেন রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস।তবে তাঁকে সন্ত্রস্ত এলাকায় না যাওয়ার অনুরোধ মুখ্যমন্ত্রীর।কারণও ব্যাখ্যা করলেন তিনি।বৃহস্পতিবার মুর্শিদাবাদের ঘরছাড়া ১৯ প্রতিনিধিকে নিয়ে রাজভবনে যান বিজেপি রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার।রাজ্যপাল ঘরছাড়াদের সঙ্গে কথা বলেন।হিংসা বিধ্বস্ত মুর্শিদাবাদের পরিস্থিতি সরেজমিনে খতিয়ে দেখার ইচ্ছাপ্রকাশ করেন।সিদ্ধান্ত নেন বৃহস্পতিবারই মুর্শিদাবাদের উদ্দেশে পাড়ি দেবেন।একথা শোনার পরই মমতা তাঁকে মুর্শিদাবাদে না যাওয়ার অনুরোধ করেন।মুখ্যমন্ত্রী বলেন,-”আমি রাজ্যপালকে অনুরোধ করব, আরও কয়েকটা দিন অপেক্ষা করে যান।”কিন্তু মুখ্যমন্ত্রীর সেই অনুরোধে রাজ্যপাল সাড়া দেননি। রাজ্যপাল বোস বলেন,-“মুখ্যমন্ত্রী যা বলেছেন,সেটা ওঁর অনুরোধ।দিল্লি গিয়েছিলাম,এবার মাঠে নামব।মুর্শিদাবাদে ক্ষতিগ্রস্তদের সঙ্গে কথা বলব।বাস্তব পরিস্থিতি বুঝতে যাচ্ছি।”এদিকে এই ঘটনা থেকে আরও একবার নবান্ন-রাজভবন সঙ্ঘাতের আবহ তৈরি হল বলেই মনে করছেন অনেকে।
কেন রাজ্যপালকে কয়েক দিন অপেক্ষার কথা বলছেন, তারও ব্যাখ্যা দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।মমতা বলেছেন,-”আমি রিকোয়েস্ট করব,বাইরে থেকে এখন কেউ যাবেন না।আমিও তো যেতে পারতাম।যাইনি।আমি গেলে অন্যরাও যেতে চাইবেন।আমাদের (রাজ্য) মহিলা কমিশনের টিমও যেতে চেয়েছিল।কিন্তু আমি বলেছি,এখনই যেতে হবে না।”মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেন,-”ওখানে শান্তির বাতাবরণ ফিরে এসেছে।এখন কাজ কনফিডেন্স বিল্ডিং (আস্থা তৈরি করা)।সেই কাজ চলছে।” তবে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে তিনি মুর্শিদাবাদে যাবেন বলেও জানিয়েছেন মমতা।তবে তাঁর বক্তব্য,-”ঠিক সময়ে যাব।”
ঘটনাচক্রে,মুখ্যমন্ত্রী রাজ্য মহিলা কমিশনের দলকে মুর্শিদাবাদে যাওয়ার অনুমতি না-দিলেও বৃহস্পতিবার রাতেই কলকাতায় পৌঁছোনোর কথা জাতীয় মহিলা কমিশনের একটি দলের,যার নেতৃত্বে থাকবেন চেয়ারপার্সন বিজয়া রহাটকর স্বয়ং।রাজ্যপালের মতো মহিলা কমিশনের দলেরও শুক্রবার মুর্শিদাবাদের বিভিন্ন এলাকা পরিদর্শনে যাওয়ার কথা।দিল্লি থেকে দল পাঠাচ্ছে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনও।অর্থাৎ, মমতা যখন ওই এলাকায় ‘বাইরে থেকে’ কাউকে না-যাওয়ার অনুরোধ করছেন,রাজ্য মহিলা কমিশনকে বারণ করছেন,তখন রাজভবন,জাতীয় মহিলা কমিশন বা মানবাধিকার কমিশন মুর্শিদাবাদ যেতে ‘তৎপরতা’ দেখাচ্ছে।যাকে প্রশাসনের অনেকে ‘সঙ্ঘাত’ বলেই ব্যাখ্যা করছেন।
মুর্শিদাবাদের অশান্তিতে যাঁরা ঘরছাড়া হয়েছেন বলে অভিযোগ,তাঁদের একাংশকে নিয়ে বৃহস্পতিবার রাজভবনে যান সুকান্ত-সহ বিজেপির নেতারা।রাজ্যপালের কাছে তাঁরা পাঁচ দফা দাবি পেশ করেন।সামসেরগঞ্জ এবং ধুলিয়ানে গিয়ে পরিস্থিতি দেখার অনুরোধ করেন তাঁরা।সুকান্তের দাবি,-সেই অনুরোধে সাড়া দিয়েই বোস সফরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
রাজভবন থেকে বেরিয়ে সংবাদমাধ্যমকে সুকান্ত বলেন,-”রাজ্যপালকে আমরা অনুরোধ করেছি নিজে গিয়ে পরিস্থিতি দেখে আসতে।রাজ্যপাল রাজি হয়েছেন। যাঁরা আশ্রয়শিবিরে রয়েছেন,রাজ্যপাল তাঁদের কাছেও যাবেন।অশান্তি যেখানে হয়েছে, সেই এলাকাতেও যাবেন।”সুকান্তের ইঙ্গিতপূর্ণ মন্তব্য,-”রাজ্যপালকে আমরা বলেছি,আগে দেখে আসুন।তারপরে প্রয়োজনে কঠোর পদক্ষেপ করুন।সংবিধান অনুযায়ী কী পদক্ষেপ করা সম্ভব দেখে নিন।সেই অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নিন।”
সুকান্তের সঙ্গে বিশাল লামা,মালতী রাভা রায়-সহ তিন বিধায়ক ছিলেন।ছিলেন রূপা গঙ্গোপাধ্যায় এবং তাপস রায়।ছিলেন ‘আক্রান্ত’ লোকজনও।রাজ্যপাল আলাদা করে ঘরছাড়াদের সঙ্গে কথা বলেন।বিজেপি রাজ্যপালের কাছে যে পাঁচ দফা দাবি পেশ করে,সেগুলি হল—অশান্তি কবলিত এলাকায় স্থায়ী বিএসএফ ক্যাম্প তৈরি করা,যাঁদের বাড়ি ভাঙা হয়েছে,তাঁদের বাড়ি পুনর্নির্মাণ করে দেওয়া,পরিবারপিছু পাঁচ লক্ষ টাকা করে ক্ষতিপূরণ,প্রত্যেক আক্রান্ত পরিবারে একজনকে স্থায়ী সরকারি চাকরি দেওয়া এবং দোষীদের ‘দৃষ্টান্তমূলক’ শাস্তি নিশ্চিত করা।
প্রসঙ্গত,বুধবার নেতাজি ইন্ডোরে ইমাম-মোয়াজ্জিমদের সম্মেলন থেকে মুখ্যমন্ত্রী ঘোষণা করেছিলেন,অশান্তিতে নিহত তিন জনের পরিবারকে ১০ লক্ষ টাকা করে ক্ষতিপূরণ দেবে রাজ্য সরকার।যাঁদের বাড়িঘরের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে,তাঁদের বাংলার বাড়ি প্রকল্পে বাড়ি করে দেওয়া হবে।যাঁদের দোকান লুটপাট হয়েছে, তাঁদের ক্ষতির পরিমাণ কত,তার হিসাব করার দায়িত্ব মুখ্যমন্ত্রী দিয়েছিলেন মুখ্যসচিব মনোজ পন্থকে।