পরিবার নিয়ে ঘুরতে গিয়েছিলেন ভূস্বর্গে।কিন্তু আর ফেরা হল না বাড়ি।মঙ্গলবার দুপুরে অনন্তনাগ জেলার পহেলগাঁওয়ের এক রিসর্টে জঙ্গি হামলায় মৃত্যু হয়েছে অন্তত ২৬ পর্যটকের।যার মধ্যে রয়েছেন বাংলার তিন বাসিন্দা।এর মধ্যে দু’জনের বাড়ি কলকাতাতে এবং একজনের পুরুলিয়ায়।
জানা গিয়েছে,বেহালার সখেরবাজারের বাসিন্দা সমীর গুহ। পরিবার নিয়ে দিন কয়েক আগেই কাশ্মীরে বেড়াতে গিয়েছিলেন তিনি।বুধবারই ফেরার কথা ছিল তাঁদের। কিন্তু তা আর হল না। স্বামীকে ছাড়াই কলকাতায় ফিরতে হচ্ছে সমীরের স্ত্রী শবরীকে। কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মচারী সমীরকে নির্বিচারের গুলি করে খুন করে জঙ্গিরা। কাঁদতে কাঁদতে সেই অভিজ্ঞতার কথা জানালেন তাঁর স্ত্রী। তিনি বলেন, ”আচমকাই কয়েক জন ঘিরে ধরে আমাদের। সকলের মুখেই মাস্ক ছিল। এসেই আমাদের সকলকে বলে, মাটিতে শুয়ে পড়তে। সকলের হাতেই ছিল বন্দুক। ভয়ে আমরা শুয়ে পড়ি। তখন বেছে বেছে আমার স্বামী এবং অন্য এক জনকে গুলি করে জঙ্গিরা।”
শুধু সমীর নয়, একই পরিণতি হয় কলকাতার বৈষ্ণবঘাটা পাটুলির বাসিন্দা বিতান অধিকারীর। মঙ্গলবার দুপুরেও স্ত্রী সোহিনী এবং সন্তানকে নিয়ে জম্মু-কাশ্মীরের পহেলগাঁওয়ে হইহই করে ঘুরেছেন। বাড়িতে ফোন করে কথা বলেছেন। কিন্তু ঘণ্টাখানেক পরেই পাল্টে যায় সব কিছু। সোহিনী চোখের সামনে দেখলেন কী ভাবে জঙ্গিরা গুলি করে মেরে ফেলল তাঁর স্বামীকে! বিতান কর্মসূত্রে থাকতেন ফ্লরিডায়। বহুজাতিক সংস্থায় কর্মরত যুবকের স্ত্রী সোহিনীও থাকেন সেখানে। গত ৮ এপ্রিল তাঁরা তিন বছরের পুত্র হৃদানকে নিয়ে কলকাতার বাড়িতে ফিরেছিলেন। গত ১৬ এপ্রিল তিন জনে জম্মু-কাশ্মীর বেড়াতে যান। কলকাতায় ফেরার কথা ছিল আগামী বৃহস্পতিবার। কিন্তু মঙ্গলবার বাড়িতে আসে দুঃসংবাদ।
পহেলগাঁওয়ে জঙ্গিদের গুলিতে নিহত পুরুলিয়ার ঝালদার বাসিন্দা মণীশরঞ্জন মিশ্র। তবে কর্মসূত্রে থাকতেন হায়দরাবাদে। কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা আইবিতে কাজ করতেন তিনি। আগে রাঁচীতে ছিলেন, সম্প্রতি বদলি হয়ে চলে যান হায়দরাবাদে। সেখানেই স্ত্রী, এক ছেলে এবং এক মেয়েকে নিয়ে থাকতেন মণীশ। পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, পরিকল্পনা অনুযায়ী ১৫ এপ্রিল হায়দরাবাদ থেকে স্ত্রী, সন্তানদের নিয়ে মণীশরঞ্জন প্রথমে অযোধ্যা যান। সেখান থেকে হরিদ্বার হয়ে সপরিবার তিনি কাশ্মীরের পহেলগাঁওয়ে পৌঁছোন। কথা ছিল, পহেলগাঁও থেকে বৈষ্ণোদেবী মন্দিরে যাবেন। সেখানেই তাঁর বাবা, মা এবং ভাইয়ের পরিবারেরও যাওয়ার কথা ছিল। একসঙ্গে সকলে ঘোরার পরিকল্পনা করেছিলেন মণীশ। সেইমতো মঙ্গলবার পুরুলিয়ার ঝালদার বাড়ি থেকে মণীশের পরিবার রওনা দেয় বৈষ্ণোদেবীর উদ্দেশে। কিন্তু ডালটনগঞ্জ পৌঁছোনোর পরই ফোনে জানতে পারে, পহেলগাঁওয়ে জঙ্গিহানায় মৃত্যু হয়েছে মণীশের। সেই পরিস্থিতিতে আর বৈষ্ণোদেবী না গিয়েই ঝালদায় ফিরে আসে পরিবার।