নিউ দিল্লি রেল স্টেশনে ভয়াবহ পদপিষ্টের ঘটনায় নিহত ১৮ জন।এঁদের মধ্যে বেশিরভাগই মহিলা এবং শিশু।এই দুর্ঘটনার নেপথ্যের কারণ নিয়ে রেলের দাবির সঙ্গে দিল্লি পুলিশের যুক্তি মিলছে না!দিল্লি পুলিশের দাবি,এমনিতেই সব ট্রেন দেরিতে চলছিল।এছাড়া,প্রয়াগরাজের মহাকুম্ভে যাওয়ার জন্য আচমকাই একটি স্পেশ্যাল এক্সপ্রেস ট্রেনের ঘোষণা শুনেই যাত্রীদের মধ্যে হুড়োহুড়ি পড়ে যায়।যার জেরেই এত বড় দুর্ঘটনা ঘটেছে।

এদিকে,এই ঘটনার সময় নতুন দিল্লি রেলওয়ে স্টেশনে উপস্থিত ভারতীয় বিমান বাহিনীর সার্জেন্ট অজিত বলেন,-“রেলওয়ে স্টেশনে আমাদের একটি ত্রি-সেবা অফিস রয়েছে।যখন আমি আমার ডিউটি শেষ করে ফিরছিলাম,তখন অতিরিক্ত ভিড়ের কারণে আমি সেখানে পৌঁছতে পারিনি।আমি লোকজনকে বোঝানোর চেষ্টা করেছিলাম এবং প্ল্যাটফর্মে অতিরিক্ত ভিড় না করতে সবাইকে অনুরোধ করেছিলাম।প্রশাসন দুর্ঘটনা এড়ানোর জন্য কঠোর পরিশ্রম করছিল,কিন্তু কেউ কথা শুনছিল না।আমি আমার এক বন্ধুর সাহায্যে আহতদের সেবা করতেও এগিয়ে যাই!”

অন্য এক প্রত্যক্ষদর্শী জানান,-“ভিড় নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গিয়েছিল।ফুটওভার ব্রিজেও বিপুল ভিড় ছিল,যা আশঙ্কার চেয়েও অনেক বেশি।এমন দৃশ্য আমি কখনও দেখিনি,এমনকি উৎসবের সময়ও না।প্রশাসন এবং এনডিআরএফের কর্মীরাও সেখানে ছিলেন, কিন্তু পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়।” এলএনজেপি হাসপাতালে এক ব্যক্তি জানান,-“পদপিষ্টের ঘটনায় তিনি তাঁর বোনকে হারিয়েছেন।আমরা ১২ জন একসঙ্গে মহাকুম্ভে যাচ্ছিলাম।আমরা তখনও প্ল্যাটফর্মে পৌঁছাইনি,শুধু সিঁড়ির ধাপে ছিলাম।আমার পরিবারের সদস্যরা,যার মধ্যে আমার বোনও ছিল,ভিড়ের চাপে আটকে পড়ে।আধ ঘণ্টা পর ওকে খুঁজে পাই, কিন্তু ততক্ষণে সে মরে গিয়েছে।”আরেক প্রত্যক্ষদর্শীর মতে,-“ট্রেনের প্ল্যাটফর্ম পরিবর্তনের ঘোষণা শোনার পরই দুই দিক থেকে মানুষ ছুটে আসে,ফলে এই বিপর্যয় ঘটে।” তিনি বলেন,-“ঘোষণা করা হয়েছিল যে ১২ নম্বর প্ল্যাটফর্মে আসার কথা ছিল যে ট্রেন,সেটি ১৬ নম্বর প্ল্যাটফর্মে আসবে।তখনই দুই দিক থেকে হুড়োহুড়ি শুরু হয় এবং পদপিষ্টের ঘটনা ঘটে।”স্টেশনে যাত্রীদের অতিরিক্ত চাপ ও ১,৫০০ সাধারণ টিকিট বিক্রির কারণেও পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে ওঠে।এনডিআরএফ কমান্ড্যান্ট দৌলত রাম চৌধুরী জানান,-“আমরা খবর পাই যে ১৪ নম্বর প্ল্যাটফর্মে পদপিষ্টের ঘটনা ঘটেছে।আহতদের উদ্ধার করা হয়েছে, পরিস্থিতি এখন নিয়ন্ত্রণে।”রেল পুলিশের ডেপুটি কমিশনার কেপিএস মালহোত্রা বলেন,-“আমরা জানতাম যে প্রচুর ভিড় হবে,তবে মুহূর্তের মধ্যে পরিস্থিতি এমন জায়গায় পৌঁছায়, যা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয়নি।রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ তদন্তের মাধ্যমে ঘটনার প্রকৃত কারণ খুঁজে বের করবে।”

এদিকে,রেল বোর্ড জানিয়েছে,-দুর্ঘটনার কারণ খতিয়ে দেখতে দু’সদস্যের উচ্চ পর্যায়ের কমিটি গঠন করা হয়েছে।রেল বোর্ডের নির্বাহী পরিচালক (তথ্য ও প্রচার) দিলীপ কুমার বলেন,-“কমিটি গঠন করা হয়েছে, পরিস্থিতি এখন স্বাভাবিক, এবং যাত্রীদের বিশেষ ট্রেনে পাঠানো হয়েছে।”তিনি আরও জানান,-নতুন দিল্লি রেলওয়ে স্টেশনে যাত্রীদের চাপ স্বাভাবিকের তুলনায় অনেক বেশি ছিল,যার জন্য রেল কর্তৃপক্ষ চারটি অতিরিক্ত বিশেষ ট্রেন চালায়।পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে কিছু সময়ের জন্য স্টেশনে প্রবেশও বন্ধ রাখা হয়েছিল।রেল পুলিশের ডেপুটি কমিশনার কেপিএস মালহোত্রা জানান,-“পদপিষ্টের ঘটনাটি ঘটে ১৪ নম্বর প্ল্যাটফর্মে,যেখানে প্রয়াগরাজ এক্সপ্রেস দাঁড়িয়ে ছিল।এছাড়াও, স্বতন্ত্র সেনানি এক্সপ্রেস ও ভুবনেশ্বর রাজধানী এক্সপ্রেসের দেরির কারণে ১২, ১৩ ও ১৪ নম্বর প্ল্যাটফর্মে ব্যাপক ভিড় জমে যায়,যা পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তোলে।”

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *