সম্প্রতি দ্বিতীয় বিয়ে করেছেন বাংলাদেশের বিখ্যাত গায়ক তাহসান। মিথিলা ও তার একটি ১১ বছরের মেয়ে রয়েছেন। তারপরেও নতুন করে নিজের জীবন গুছিয়ে নিলেন তাহসান। তবে এরপরই বহু বাংলাদেশীর ফেসবুকের পাতায় ছেয়ে গিয়েছে ‘তাহসান জিতেছে তাহসান জিতেছে’ রব। আর এই বিষয়টি চোখ এড়ায়নি লেখিকা তসলিমা নাসরিনের। কি লিখলেন তিনি এই বিষয়ে?

তসলিমা (Taslima Nasrin) লেখেন, ‘ফেসবুক ছেয়ে গেছে তাহসান জিতেছে তাহসান জিতেছে রবে। কেন তাহসান জিতেছে, বুঝে পেলাম না। সে একটা মেয়েকে বিয়ে করেছে বা করতে যাচ্ছে। এর মধ্যে জেতাজেতির কী হলো! হেটারোসেক্সুয়ালদের বিপরীত লিঙ্গে আকর্ষণ থাকে, তারা জীবনের কোনও এক সময় পছন্দসই কাউকে পেলে তার সঙ্গে প্রেম করে, লিভ ইন করে বা তাকে বিয়ে করে। এ তো স্বাভাবিক। জিতলো কেন তাহলে তাহসান? আসলে যারা জিতেছে জিতেছে বলে চেঁচাচ্ছে, তারা চেঁচাচ্ছে কারণ তারা মনে করেছে তাহসান এক বাচ্চার বাবা হয়েও, ডিভোর্সী হয়েও একটা কচি সুন্দরী ভার্জিন মেয়ে পেয়েছে। মর্ত্যে বসে যত খুশি এবং যেভাবে খুশি নারী ভোগ করার পর স্বর্গে গিয়ে সঙ্গমের জন্য ভার্জিন হুর পেয়ে যাওয়াকে মুসলমানরা জিতে যাওয়াই মনে করে।’

তসিলাম (Taslima Nasrin) ফের লেখেন, ‘কিন্তু রোজা আহমেদ রক্ত মাংসের মানুষ, হুর নয়, খুব সম্ভবত ভার্জিনও নয়। রাজকন্যার জীবন তার ছিল না, খুব স্ট্রাগল করেছে জীবনে। দারিদ্রের বিরুদ্ধে দীর্ঘ দীর্ঘ দিন সংগ্রাম করে একটি মেয়ে নিজের পায়ে দাঁড়িয়েছে। কঠিন সংগ্রামের দিনগুলোয় নিজের লক্ষ্যে স্থির ছিল বলে, নিজের স্বপ্ন যে করেই হোক পুরণ করতে চেয়েছিল বলে নারীবিদ্বেষী সমাজ রোজাকে কম নিন্দে করেনি, কম অপমান করেনি, কম অপদস্থ করেনি। মিথিলার বিরুদ্ধেও কম কুৎসা রটায়নি এই সমাজ।’

তসলিমার কথায়, ‘তাহসান জিতেছে, এই নিয়ে সবাই উল্লাস করছে। নারীবিদ্বেষী সমাজে সব পুরুষই জেতে। তাদের হার নেই। হারতে হয় শুধু নারীকেই। কিন্তু আমি কি মনে করি মিথিলা বা রোজা হেরেছে? না। তারা একটুও হারেনি। তারা স্বর্নিভরতা এবং স্বাধীনতা উপভোগ করতে পারছে– নারীবিদ্বেষী সমাজে নারীর জিতে যাওয়ার প্রথম শর্তই এটি। তারা ভ্রুক্ষেপ করছে না কুৎসা বা নিন্দে, এ জিতে যাওয়ার দ্বিতীয় শর্ত। ভাল না লাগলে তারা তাদের সঙ্গীকে, সে প্রেমিক হোক, সে স্বামী হোক, ত্যাগ করতে পারছে, তারা বাধ্য নয় তাদের সঙ্গে এক ছাদের তলায় বাস করতে, জিতে যাওয়ার এটি তৃতীয় শর্ত। স্বামীকে যদি কখনও পছন্দ না হয় রোজার, তার স্বনির্ভরতাই তাকে সাহস জোগাবে স্বামীকে ত্যাগ করার। পুরুষতান্ত্রিক সমাজে পুরুষের জেতা কোনও চ্যালেঞ্জ নয়। নারীর জন্যই এ চ্যালেঞ্জ। দুই নারীই তিন শর্তের চ্যালেঞ্জে জিতেছে। চ্যালেঞ্জহীন জয়ের চেয়ে চ্যালেঞ্জের জয় ঢের বেশি গৌরবময়। জয়তু নারী।’

আরও পড়ুন: Gangasagar Mela: গঙ্গাসাগর মেলার জন্য বিশেষ ট্রেন!

Image source-Google

By Torsha

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *