পৃথিবীর একমাত্র উপগ্রহ চাঁদ। যেটি ভারতের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। মাত্র ৩,৮৪,৩৯৯ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত পৃথিবীর একমাত্র এই উপগ্রহটি সাড়ে চার বিলিয়ন বছর ধরে পৃথিবীর সঙ্গে রয়েছে। এমনকি, পৃথিবীকে প্রাণীর বাসযোগ্য করার ক্ষেত্রেও চাঁদের বিশাল অবদান রয়েছে বলেও দাবি করেছেন বিজ্ঞানীরা। সম্প্রতি এক গবেষণায় বলা হয়েছে, চাঁদের গঠনের ফলেই পৃথিবীতে জলের অস্তিত্ব আছে। আর এই জলই হচ্ছে জীবের টিকে থাকার প্রথম ও প্রধান উপাদান। তবে, এসব ছাড়াও চাঁদের আরও একটি পরিচয় রয়েছে! পৃথিবীর সবচেয়ে নিকটতম প্রতিবেশি ও মহাজাগতিক বস্তু হল এই চাঁদ। পৃথিবীর জোয়ার-ভাটা, ঘূর্ণন এমন বেশ কিছুক্ষেত্রে চাঁদের সরাসরি ভূমিকা রয়েছে। বলে রাখা ভালো, মানুষ প্রথম যে মহাজাগতিক বস্তুর বুকে পা রাখে, সেটাও কিন্তু এই চাঁদ। আর সত্যি বলতে, যেদিক থেকেই দেখি না কেন, চাঁদ আমাদের কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু, চাঁদের অস্তিত্ব যদি একেবারেই না থাকত, তাহলে পৃথিবীর অবস্থাটা কেমন হত? কী প্রভাবই-বা পড়ত মনুষ্য জীবনে?

• চাঁদ না থাকলে সামুদ্রিক অবস্থা ও পৃথিবীর ভারসাম্যের বিপর্যয় ঘটবে। কারণ, পৃথিবী যেমন চাঁদকে মহাকর্ষীয় বলের দ্বারা নিজের দিকে টানে, তেমনি চাঁদও পৃথিবীর উপর মহাকর্ষীয় বলের প্রভাব খাটায়। চাঁদের মহাকর্ষীয় বলের কারনে পৃথিবীর ঘূর্ণন গতি কম থাকে। এছাড়া, চাঁদের এই মাধ্যাকর্ষনজনিত বলের কারনে সমুদ্রের জল ফুলে ওঠে এবং সেই জলেতে বাতাস লাগে ফলে ঢেউয়ের সৃষ্টি হয়। পৃথিবীর আবর্তনের কারনে সমুদ্র যখন চাঁদের দিকে আসে তখন চাঁদের আকর্ষনে সেখানে উচ্চ জোয়ারের সৃষ্টি হয়, আবার ঠিক তার বিপরীতে তখনই নিম্ন জোয়ারের সৃষ্টি হয় এবং বাকি দুই পাশে তখন ভাটার সৃষ্টি হয়।

তবে, পৃথিবী যেহেতু ঘুরছে তাই পৃথিবীর ঘূর্ণন-এর কারনে জোয়ার-ভাটারও দিক পরিবর্তন হয়। কিন্তু, চাঁদ যদি না থাকে তাহলে বর্তমানের উচ্চ জোয়ারগুলো প্রায় তিন ভাগের এক ভাগের মতো হবে এবং নিম্ন জোয়ারগুলো আরও নিম্ন হবে, ফলে জোয়ার-ভাটার উপর নির্ভর করে বেঁচে থাকা প্রাণীগুলি র উপর মারাত্মক প্রভাব পড়বে।

• চাঁদ না থাকলে দিনের সময়সীমাতেও প্রভাব পড়বে। কারণ, চাঁদের আকর্ষণ না থাকায় পৃথিবী যে অক্ষরেখা কেন্দ্র করে নিজের চারপাশে ঘুরছে, সেটা নড়ে যাবে। এমনকি, সূর্যের চারপাশে পৃথিবীর প্রদক্ষিণতলের সঙ্গে তার অক্ষরেখার কৌণিক অবস্থানও বদলে যেতে পারে। তখন এমন অবস্থা হতে পারে যে, পৃথিবীর উত্তর ও দক্ষিণ গোলার্ধে পালাক্রমে ছয় মাস অন্তর প্রচণ্ড শীত ও প্রচণ্ড গরম থাকবে এবং শেষ পর্যন্ত পৃথিবীতে প্রাণের অস্তিত্ব বিলুপ্ত পর্যন্ত হয়ে যেতে পারে।

এসবের পাশাপাশি চাঁদ না থাকলে সমুদ্রের ভারসাম্য নষ্ট হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সমুদ্রের ভিতরে থাকা নানারকম প্রানীজগতেরও ক্ষতি হবে। কারণ তারা তখন সমুদ্রের পরিস্থিতির সঙ্গে নিজেদেরকে মানিয়ে নিতে পারবে না। সেই সাথে চাঁদের আলোর ওপর নির্ভরশীল হয়ে অল্প আলোতে শিকারে বের না হতে পারায়, তারা আর তাদের খাদ্য সংগ্রহ করতে পারবে না।

এমনকি, চাঁদ না থাকার কারণে সমুদ্রের পাশাপাশি ভূপৃষ্ঠের অস্থিতিশীল অবস্থা সৃষ্টি হবে। কারণ তখন শীত বা গরমের কোনো ঠিক ঠিকানা থাকবে না। যার কারনে মানুষ-সহ অন্যান্য জীবজাতিও খুব সহজেই বেঁচে থাকার অযোগ্য হয়ে পড়বে। তবে সে সময় যদি এরকম পরিস্থিতির সাথে মানুষ বা যে কোন জীব খাপ খাইয়ে নিতে পারে, তবে তারা হয়ে উঠবে বর্তমান সময়ের চাইতে বহু গুন বেশি শক্তিশালী। যদিও আপাতত এমন পরিস্থিতি তৈরি কবে হবে তা জানা যায়নি। কিন্তু, এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি হলে পৃথিবী যে প্রায় মুছেই যাবে, তা নিশ্চিতভাবে বলাই যায়।

 

 

আরো দেখুন:Gas:পুজোর পরই বিনামূল্যে গ্যাস সিলিন্ডার দেবে কেন্দ্র সরকার!কারা পাবেন এই গ্যাস?