উদয়ন গুহর পর এবার বাম আমলের নিয়োগ দুর্নীতি নিয়ে সরব হলেন প্রাক্তন বাম নেতা তথা বর্তমান শাসকদলের রাজারহাট নিউ টাউনের বিধায়ক তাপস চট্টোপাধ্যায় (Tapas Chatterjee)। এদিন সরাসরি তাঁকে বলতে শোনা গেল, “বাম আমলে পার্টির সুপারিশে চাকরি পেয়েছেন অনেকেই। আমি নিজে সেই সময়ে তাঁর সাক্ষী ছিলাম।” আর তাপস চট্টোপাধ্যায়ের এই বক্তব্য প্রকাশ্যে আসতেই নতুন করে চাপানোতোর শুরু হয়েছে রাজ্য রাজনীতিতে।
বৃহস্পতিবার উত্তর ২৪ পরগনার মধ্যমগ্রামে জেলা পার্টি অফিসে এক সাংবাদিক সম্মেলনে উপস্থিত হয়েছিলেন দলের নেতৃত্বরা। সেখানে হাজির ছিলেন সংসদ তথা বারাসাত সাংগঠনিক জেলা তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি ডাঃ কাকলি ঘোষ দস্তিদার, খাদ্যমন্ত্রী রথীন ঘোষ, বিধায়ক চিরঞ্জিত চক্রবর্তী, বিধায়ক তথা উত্তর ২৪ পরগনা জেলা পরিষদের পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ নারায়ণ গোস্বামী, তাপস চট্টোপাধ্যায়, রাজারহাট নিউটাউনের যুব তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি আফতাব উদ্দিন।
সেখানেই প্রকাশ্য সাংবাদিক বৈঠকে বাম আমলের নিয়োগ দুর্নীতি নিয়ে একের পর এক বিস্ফোরক মন্তব্য করেন তাপস চট্টোপাধ্যায় । তিনি বলেন,”বাম আমলে কীভাবে চাকরি হয়েছে,তা আমার থেকে ভালো কেউ আর জানেনা। সেইসময় পার্টি যে সিদ্ধান্ত করে তালিকা পাঠাতো,সেই সুপারিশ মেনে নিতে বাধ্য হত স্কুলের পরিচালন সমিতি।এই ভাবে কয়েক হাজার লোকের চাকরি দিয়েছেন সিপিএম নেতারা।যেহেতু পার্টির সিদ্ধান্ত ছিল,এই অনৈতিক কাজে আমাকেও শরিক হতে হয়েছে। এখন বলতে বাধ্য হচ্ছি। সিপিএম তুমি আজকে সাধু হয়েছ, আর আমরা সবাই চোর।
এদিন তিনি আরও বলেন, আমি মুখ খুললে সিপিএমেরই সমস্যা হবে। অনেক কিছুই জানি। শুধু চিরকুটে কেন অনেক ক্ষেত্রে পার্টির সুপারিশেও চাকরি হয়েছে। আমি কাউকে সুপারিশ না করলেও তখন বিষয়টি সাধারণ হিসেবেই নিয়েছিলাম। আমার বিধানসভা এলাকা রাজারহাট,নিউটাউনে কারা কারা চাকরি পেয়েছে তাঁদের নাম ধরে বলে দিতে পারি। কিন্তু,এখনই তা প্রকাশ্যে আনছি না। সিপিএমের কাউকে ব্যাক্তিগত আক্রমণও করতে চাইছি না। তবে মুখ্যমন্ত্রী যদি কখনও জানতে চান,তখন তাঁকে সব জানাব।
উল্লেখ্য, বাম আমলে রাজারহাট অঞ্চলে সিপিএমের দাপুটে নেতা ছিলেন তাপস চট্টোপাধ্যায়। সিপিএমের জেলা কমিটির সদস্যপদে থাকার পাশাপাশি রাজারহাট-গোপালপুর পৌরসভার চেয়ারম্যান পদও সামলেছেন টানা ১৫ বছর। ১৯৭৭ সাল থেকে সিপিএম দলের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে ছিলেন তিনি। পরবর্তীতে দলের সঙ্গে বনিবনা না হওয়ায় ও মতাদর্শগত পার্থক্য তৈরি হওয়ায় ২০১৫ সালে সিপিএম ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দেন একদা লাল ঝান্ডার দোর্দন্ডপ্রতাপ এই নেতা।
প্রসঙ্গত, পশ্চিমবঙ্গের রাজ্য রাজনীতিতে এই মুহূর্তে সবথেকে চর্চিত বিষয় নিয়োগ দুর্নীতি। চাকরি ক্ষেত্রে দুর্নীতির অভিযোগ তুলে যখন শাসকদলকে বিদ্ধ করছেন বিরোধীরা , ঠিক সেই সময় পাল্টা বাম জামানার সময় চাকরি দুর্নীতি নিয়ে চরম হয়ে উঠেছেন খোদ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এই পরিস্থিতিতে উদয়ন গুহর পর নতুন করে তাপস চট্টোপাধ্যায় সরব হওয়ায় অস্বস্তিতে পড়তে পারেন বাম দুর্গের নেতারা এমনটাই মনে করছেন ওয়াকিবহল-মহলের একাংশ।