বিপ্লবী শহর মেদিনীপুরে শুধু বিপ্লবীদের জন্মস্থল বা কর্মস্থল ছিল তা নয় তারই সঙ্গে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথের প্রচুর কার্যকারিতা ও বিচরণ ক্ষেত্র ছিল এই বাংলা ভূমিতে। আর তাই এই জেলার বিভিন্ন জায়গায় তার ছাপ রয়ে গিয়েছে। ঠিক যেমন মেদিনীপুর শহরের কৈবল্যদায়িনি কলেজ ওরফে কেডি কলেজেও রবীন্দ্রনাথের চিহ্ন রয়ে গেছে বহু যুগ ধরে। আর সেই চিহ্নকেই এবার মিউজিয়ামের রূপান্তরিত করতে চলেছে এই কলেজ কর্তৃপক্ষ।
যদিও ঘটনা ক্রমে বলা যায় ১৯৩৯ সালের ডিসেম্বর মাসে বাংলার ১৩৪৬ বঙ্গাব্দের ৩০শে অগ্রহায়নে অবিভক্ত মেদিনীপুরের বিদ্যাসাগর হল উন্মোচন করতে এসেছিলেন কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। শুধু নিজে এসেছিলেন তা নয় তার সঙ্গে ছিলেন তৎকালীন সময়ে একাধিক বিভিন্ন বিষয়ে পারদর্শী ও বিখ্যাত মানুষজন। এ বিদ্যাসাগর হল উন্মোচনের পরেই রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর যান এই কেডি কলেজ অফ কমার্সে। যদিও সেই সময় এই কলেজ নামকরণ ঘটেনি। তবে এই কলেজের একটি রুমে রবীন্দ্রনাথ কবিগুরু নিজের সঙ্গীদের নিয়ে রাত্রি নিবাস করেন। তাছাড়া এই রুমের চেয়ারে বসে তিনি আলাপচারিতা সারেন নিজেদের প্রিয়জনদের সঙ্গে। এরপর জল গড়িয়েছে বহুদূর।সময়ের সঙ্গে পরিবর্তন হয়েছে অনেক কিছুই।আস্তে আস্তে এই রামগড়ের রাজার দেওয়া এই ভবনের রূপান্তরিত হয় কেডি কলেজ অফ কমার্সে। কিন্তু রবীন্দ্রনাথের সেই বিচরণ ভূমি তথা এই শয্যাগৃহটি আজও রয়ে গেছে সেরকমই।
পরবর্তীকালে যত জন এই কলেজের অধ্যক্ষ এসেছেন তারা চেষ্টা করেছেন এই রুমের মহত্ব বুঝতে এবং বোঝাতে।কিন্তু কলেজের আয়তন ও জায়গা কম থাকায় রুমটিকে কোন ভাবে আলাদাভাবে সাজাতে পারেন নি কোনও অধ্যক্ষই। কিন্তু বর্তমানের কলেজ অধ্যক্ষ দুলাল চন্দ্র দাস এই রুমটি কে মিউজিয়ামে রূপান্তরিত করেতে চলেছেন সম্প্রতি। কলেজ সূত্র অনুযায়ী তৎকালীন সময়ে কবিগুরুর বহু চর্চিত এবং ব্যবহার ব্যবহৃত জিনিস রয়েছে। রয়েছে কবিগুরুর ছোটবেলা থেকে বড়বেলার ভিন্ন ভিন্ন চিত্র ছবি। তাছাড়া রয়েছে তৎকালীন সময়ের কাগজ বহু নিদর্শন,কবিগুরুর ব্যবহৃত চেয়ার প্রভৃতি। আর সেই সব তথ্য ও তত্ত্ব নিয়েই এই মিউজিয়াম করতে চলেছে কলেজ কর্তৃপক্ষ। যাতে শুধু কলেজের ছাত্র-ছাত্রীরা নয় যারা কবিগুরুর অনুরাগী,যারা কবিগুরু কে ভালোবাসেন তারা যাতে কবি গুরুর তথ্য সংগ্রহ করতে পারে এবং সম্পর্কে অবহিত হতে পারেন তাই জন্যই এই মিউজিয়াম তৈরি।
শুধু তাই নয়,জেলা ও রাজ্যের পাশাপাশি দেশ-বিদেশের পড়ুয়ারাও যাতে কবি গুরুর ব্যবহৃত জিনিস পরিদর্শন করতে সঙ্গে জানতে এবং শিখতে এই মিউজিয়ামে আসেন তারই ব্যবস্থা করতে চলেছে এই কলেজ কর্তৃপক্ষ। এরই সঙ্গে বিভিন্ন সোশ্যাল সাইটে ও অনলাইনের মাধ্যমেও পেজ খুলে সে কবিগুরুর বহু নিদর্শন তুলে ধরতে চাইছে এই কলেজের বর্তমান কর্তৃপক্ষরা। আর এই মিউজিয়াম হতে চলায় খুশি কলেজ কর্তৃপক্ষ সহ কলেজের ছাত্রছাত্রীরা। কলেজ পড়ুয়া সৌমনি সাহা,অন্বেষা দাস,সনাক্ত দেরা বলেন আমরা খুবই খুশি। আমরা চাই আমাদের কলেজের মান উজ্জ্বল হোক সম্মান বাড়ুক এবং রবীন্দ্র অনুরাগীরা ভিড় জমাক আমাদের মিউজিয়ামে। কলেজের স্টাফ তথা প্রাক্তনী ইন্দ্রজিৎ পানিগ্রাহী বলেন এই মিউজিয়ামে থাকছে রবীন্দ্রনাথের ব্যবহৃত গ্রামোফোন,বিভিন্ন ছবি ছাপা সঙ্গে তার শয়নের আসবাবপত্র।
আরও পড়ুন : Rudranil Ghosh:দুয়ারে ভুত!তৃণমূলকে ফের কটাক্ষ রুদ্রনীলের