পহেলগাঁও জঙ্গি হামলার বদলা নিতে তিন সামরিক বাহিনীকে ‘পূর্ণ স্বাধীনতা’ দিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।মঙ্গলবার জম্মু-কাশ্মীরে সন্ত্রাসবাদ দমন অভিযান নিয়ে নয়াদিল্লিতে প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনে উচ্চপর্যায়ের বৈঠক হয়।এদিন এখানে উপস্থিত ছিলেন প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং,জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভালও।প্রায় দেড়ঘন্টা ধরে চলে ওই বৈঠক।সূত্রের খবর,প্রত্যাঘাতের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ভার সেনার উপরেই ছেড়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।তিন বাহিনীর সর্বাধিনায়ক ও প্রধানদের উদ্দেশে তিনি বলেন,-“ভারতীয় সেনার উপরে আমাদের পূর্ণ বিশ্বাস ও ভরসা রয়েছে।দেশকে সুরক্ষিত রাখার দায়িতব কিভাবে পালন করা যাবে তা তারা ভাল জানেন।তাই পহেলগাঁওয়ে যে সন্ত্রাসী হামলা চলেছে তার জবাব কিভাবে,কখন দেওয়া হবে তা নিয়ে সিদ্ধান্ত নেবে সেনা।প্রত্যাঘাতের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে সেনাকে পূর্ণ স্বাধীনতা দেওয়া হচ্ছে।”
বস্তুত,গত মঙ্গলবার (২২ এপ্রিল) পহেলগাঁওয়ের বৈসরণে অতর্কিতে হামলা চালিয়ে ২৬ নিরীহ পর্যটককে গুলিতে ঝাঁঝরা করে দেয় পাকিস্তানি মদতপুষ্ঠ জঙ্গিরা।কুখ্যাত জঙ্গি নেতা হাফিজ সঈদের নেতৃত্বাধীন সন্ত্রাসী সংগঠন লস্কর-ই-তৈয়বার সহযোগী শাখা ‘দ্য রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট’ ওই হামলার দায় স্বীকার করেছে।নিরীহ পর্যটকদের নির্মম হত্যাকাণ্ডে ফুঁসছে গোটা দেশ।পাকিস্তানকে চরম শিক্ষা দেওয়ার দাবিতে সরব হয়েছেন সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতারা।
পহেলগাঁওয়ের ভয়াবহ হামলার জবাব কীভাবে দেওয়া হবে,তা নিয়ে গত বুধবার সন্ধেয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাসভবনে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার নিরাপত্তা সংক্রান্ত কমিটির বিশেষ বৈঠক বসেছিল।প্রায় দু’ঘন্টা ধরে চলে বৈঠক।ওই বৈঠক শেষে জরুরি সাংবাদিক সম্মেলন করেন বিদেশ সচিব বিক্রম মিশরি।সাংবাদিক বৈঠকে তিনি বলেন,-“পহেলগাঁওয়ে মঙ্গলবার যে কাপুরোষিত হামলা চলেছে তাতে পাকিস্তানের যোগসাজশ স্পষ্ট।দীর্ঘদিন ধরে সতর্ক করা সত্বেও সন্ত্রাসবাদী কাজকর্মে লাগাম টানছে না পাকিস্তান।তাই বেশ কয়েকটি সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে নিরাপত্তা সংক্রান্ত মন্ত্রী কমিটির বৈঠকে।পাক নাগরিকদের আর কোনও ভিসা দেওয়া হবে না।সেই সঙ্গে যে ভিসা রয়েছে তা বাতিল করা হয়েছে।৪৮ ঘণ্টার মধ্যে দেশ ছাড়তে হবে ভারতে থাকা পাক নাগরিকদের।দেশে ফেরানো হচ্ছে পাকিস্তানে থাকা অধিকাংশ ভারতীয় আধিকারিককে।দিল্লিতে পাকিস্তানি দূতাবাসে থাকা প্রতিরক্ষা সংক্রান্ত তিন আধিকারিককে ফিরিয়ে নিতে বলা হয়েছে।দুই দেশের দূতাবাসে কর্মী ও আধিকারিকের সংখ্যা ৫৫ থেকে কমিয়ে ৩০-এ নামিয়ে আনার সিদ্ধান্ত হয়েছে।পাশাপাশি সিন্ধু জল চুক্তি রদ করা হচ্ছে।”
এক সপ্তাহের মাথায় ফের কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার নিরাপত্তা সংক্রান্ত কমিটির বৈঠক ডাকায় রাজধানীর অন্দরে জোর চর্চা শুরু হয়েছে,বড় কিছু ঘটতে চলেছে।গত রবিবারই প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংহের সঙ্গে বৈঠক করেছিলেন তিন বাহিনীর সর্বাধিনায়ক অনিল চৌহান।ওই বৈঠকের পরে সোমবার (২৮ এপ্রিল) প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে বসেছিলেন প্রতিরক্ষামন্ত্রী।রাতেই ভারতীয় সেনার উত্তরাঞ্চলীয় প্রধান হিসাবে নিয়োগ করা হয়েছিল লেফটেন্যান্ট জেনারেল প্রতীক শর্মাকে।ঘটনাক্রম দেখে প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞরা নিশ্চিত,পকিস্তানকে চরম শিক্ষা দেওয়ার পথেই হাঁটা হবে এবার।
সূত্রের খবর,এদিন তিন বাহিনীর প্রধানের সঙ্গে বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী বলেন-“পহেলগাঁওয়ে যা ঘটেছে তা মানবতার লজ্জা।জঘন্য ও নৃশংস হামলায় জড়িত সন্ত্রাসবাদীদের যোগ্য জবাব দেওয়া আমাদের জাতীয় কর্তব্য এবং সংকল্প।এমন জবাব দিতে হবে যে সারা জীবন মনে রাখবে সন্ত্রাসীরা।ওই জবাব দেওয়ার দায়িত্ব সেনাবাহিনীর উপরেই ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে।তারা যে সিদ্ধান্ত নেবে তাই চূড়ান্ত।”