এবার চাকরিহারাদের কপালে জুটল শুধু লাঠিপেটা।একজন পুলিশ আবার লাথিও চালিয়ে দিলেন!আর তাতেই যেন ক্ষোভের আগুন আরও বেড়ে গেল। এরপর হাতে ৫০০ টাকার নোট নিয়ে এগিয়ে এলেন বিক্ষুব্ধরা। জোরে জোরে বলতে থাকলেন, “ঘুষ দেব ঘুষ! এই পুলিশ, টাকা নিয়ে যা টাকা।”কেউ আবার তারই মাঝে ২ টাকা এগিয়ে দিয়ে বললেন, “ওরা তো ৫০০ টাকারও যোগ্য নয়।”

প্রসঙ্গত,বুধবার সকাল থেকেই চাকরি ফিরিয়ে দেওয়ার দাবিতে রাস্তায় নামা শিক্ষকদের ওপর পুলিশের লাঠিচার্জের অভিযোগে জেলায় জেলায় তৈরি হয় উত্তপ্ত পরিস্থিতি।বারাসত,মেদিনীপুর,বর্ধমানে বিক্ষোভের সময় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জখম হয়েছেন একাধিক শিক্ষক।পাল্টা ইটের আঘাতে আহত হয়েছেন কয়েকজন পুলিশকর্মীও। এসএসসি ২০১৬-র নিয়োগ বাতিলের পর শিক্ষকদের ক্ষোভ এবার রণক্ষেত্রে রূপ নিয়েছে।বুধবার সকাল থেকে চাকরিহারা শিক্ষকরা বারাসাত, মেদিনীপুর ও বর্ধমানে ডিআই অফিস ঘেরাও করেন। তাঁদের দাবি, শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভে পুলিশ অকারণে লাঠি চালিয়েছে। এক আন্দোলনকারী বলেন, “আমরা শান্তিপূর্ণভাবে চাকরির দাবি জানাচ্ছিলাম। হঠাৎ পুলিশ লাঠি নিয়ে তেড়ে আসে।” পুলিশের দাবি, বিক্ষোভকারীরা ইট ছুঁড়ে হামলা করায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে লাঠিচার্জ করতে হয়েছে।গত বৃহস্পতিবার কলকাতা হাইকোর্ট এসএসসি ২০১৬-র পুরো প্যানেল বাতিল করে, যার ফলে প্রায় ২৬,০০০ শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী চাকরি হারান। নিয়োগে দুর্নীতির অভিযোগে এই রায় দেয় আদালত। এরপর মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নেতাজি ইন্ডোরে চাকরিহারাদের সঙ্গে সাক্ষাত করে সমর্থনের আশ্বাস দেন। তবে অনেকে এতে ভরসা না পেয়ে আন্দোলনে নামেন। বুধবারের বিক্ষোভ তারই ফল।

চাকরিহারারা সরকারের ওপর ক্ষুব্ধ। তাঁদের অভিযোগ, “যোগ্য-অযোগ্য বাছাই না করে পুরো প্যানেল বাতিলের খেসারত আমাদের দিতে হচ্ছে। পুলিশ দিয়ে মুখ বন্ধের চেষ্টা চলছে।” তাঁরা হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, “এর প্রতিবাদে আরও বড় আন্দোলন গড়ে তুলব।” বর্ধমানের এক শিক্ষক বলেন, “আমরা ন্যায় চাই। লাঠি দিয়ে সমস্যা মেটানো যাবে না।”ঘটনায় তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন তমলুকের বিজেপি সাংসদ ও প্রাক্তন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। তিনি শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে নির্ধারিত বৈঠক বাতিল করে বলেন, “কসবা থেকে বারাসত-দিকে দিকে শিক্ষকদের ওপর লাঠিচার্জ মেনে নেওয়া যায় না। সরকারের সদিচ্ছা নিয়ে প্রশ্ন আছে।” এসএসসি চেয়ারম্যানের সঙ্গে সাক্ষাতের পর তিনি নিজের প্রস্তাবিত সমাধানের চিঠি ছিঁড়ে ফেলে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে যোগ্য-অযোগ্যদের তালিকা প্রকাশের দাবি জানান।

রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে, এই ঘটনা তৃণমূল সরকারের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। চাকরি বাতিলের পর শিক্ষকদের ক্ষোভ দমাতে ব্যর্থ হলে ২০২৬-এর নির্বাচনে এর প্রভাব পড়তে পারে। পুলিশি হস্তক্ষেপ পরিস্থিতি আরও জটিল করেছে। বিজেপি এই ইস্যুকে হাতিয়ার করে সরকারের বিরুদ্ধে জনমত গড়তে চাইছে। তবে সরকার যদি দ্রুত সমাধান না দেয়, আন্দোলন আরও তীব্র হতে পারে।এসএসসি ২০১৬-র নিয়োগে দুর্নীতির অভিযোগ তদন্ত করে সিবিআই। আদালতের রায়ে দেখা গেছে, অনেকে ঘুষ দিয়ে চাকরি পেয়েছিলেন। যোগ্য প্রার্থীদের চিহ্নিত করার দায়িত্ব এখন এসএসসির। তবে এই প্রক্রিয়া দীর্ঘ হলে শিক্ষকদের আন্দোলন আরও ছড়াতে পারে।চাকরিহারা শিক্ষকরা বৃহত্তর আন্দোলনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। পুলিশি হামলার ঘটনা তাঁদের ক্ষোভকে আরও উসকে দিয়েছে। সরকার কীভাবে এই সংকট মোকাবিলা করে এবং এসএসসি কত দ্রুত তালিকা প্রকাশ করে, তার ওপরই পরিস্থিতির গতি নির্ভর করছে। জেলায় জেলায় ছড়িয়ে পড়া এই উত্তেজনা শান্ত না হলে রাজ্যে বড় অশান্তির আশঙ্কা রয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *