প্রতি বছরের মতো এবারও রেড রোডে ঈদের নামাজে যোগ দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee)।সঙ্গে ছিলেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় এবং মন্ত্রী জাভেদ খান।ঈদের শুভেচ্ছা জানানোর পাশাপাশি এই উৎসবের দিনেও রাজনৈতিক সুর চড়া ছিল মমতার কণ্ঠে।

উল্লেখ্য,প্রতি বছরের মতো এবারও রেড রোডে ঈদের নামাজের আয়োজন করা হয়।এই উপলক্ষে সকাল থেকেই রেড রোডের আশপাশের একাধিক রাস্তা বন্ধ করে দেওয়া হয়। সোমবার সকাল ৯টার কিছু পরে মুখ্যমন্ত্রী মমতা ও তৃণমূল নেতা অভিষেক রেড রোডে পৌঁছন।বস্তুত,ছ’মাস পর আবারও একই মঞ্চে মমতা-অভিষেকের উপস্থিতি তৃণমূলের একাংশকে স্বস্তি দিয়েছে।উভয়েই তাদের বক্তব্যে সম্প্রীতি রক্ষার আহ্বান জানান।মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন,-“ঈদের এই দিনে সবাই মিলে মিশে থাকুন।একদল ভেদাভেদের রাজনীতি করছে।তাদের উস্কানি থেকে দূরে থাকুন।”তিনি আরও বলেন,-“কিছু দল ধর্মের নামে ব্যবসা করছে।এটা হতে দেওয়া যাবে না।”বিজেপির পাশাপাশি বামপন্থীদেরও নিশানা করতে ছাড়েননি তিনি।মুখ্যমন্ত্রীর আরো সংযোজন,-“লাল আর গেরুয়া এক হয়ে গেছে। কিন্তু আপনারা ভয় পাবেন না।আমরা আপনাদের পাশে আছি।কোনও ক্ষতি হতে দেব না।”অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ও এদিন সম্প্রীতির ওপর জোর দেন।তিনি বলেন,-“চাঁদের কোনও ধর্ম হয় না।আমাদের মৃত্যু পর্যন্ত একতা বজায় রাখতে হবে।সবাইকে মিলেমিশে থাকতে হবে।”বিজেপির বিরুদ্ধে তাঁর কণ্ঠে ছিল কঠোর সুর।হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন,-“জীবন দিয়ে দেব,কিন্তু আদর্শ থেকে সরব না।”

রেড রোডের অনুষ্ঠান শেষ করে মমতা ও অভিষেক পার্ক সার্কাসে যান।সেখানে লাল মসজিদ,সাদা মসজিদ এলাকায় পায়ে হেঁটে ঘুরে স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলেন।এক স্থানীয় বাসিন্দা,রিয়াজ আহমেদ বলেন,-“দিদি আর অভিষেকদা আমাদের মাঝে এলে উৎসবের আনন্দ আরও বাড়ে।তাঁদের কথায় আমরা একসঙ্গে থাকার প্রেরণা পাই।”মমতা রেড রোডে তাঁর বক্তব্যে বিজেপির সমালোচনায় কোনো কসুর রাখেননি। তিনি বলেন,-“একটি দল শুধু বিভাজনের রাজনীতি করে।ধর্মের নামে উস্কানি দিয়ে সমাজ ভাঙতে চায়।কিন্তু আমরা তা হতে দেব না।” তিনি জনগণকে বারবার সতর্ক করে বলেন,-“কেউ যদি আপনাদের প্ররোচনা দেয়, সেদিকে কান দেবেন না।শান্তি ও সম্প্রীতি বজায় রাখুন।”মুখ্যমন্ত্রীর এই বক্তব্য রাজ্যে বিজেপির ধর্মীয় মেরুকরণের অভিযোগের প্রেক্ষাপটে এসেছে।সম্প্রতি বিজেপি তৃণমূল সরকারের বিরুদ্ধে সংখ্যালঘু তোষণের অভিযোগ তুলেছে।তবে মমতা এদিন স্পষ্ট করে বলেন,-“আমরা সব ধর্মের মানুষের জন্য কাজ করি।আমাদের উৎসব সবার জন্য।”

অভিষেকও তাঁর বক্তব্যে সর্বধর্ম সমন্বয়ের কথা তুলে ধরেন।তিনি বলেন,-“আমাদের একতাই আমাদের শক্তি।কেউ যদি তা ভাঙার চেষ্টা করে,আমরা তা মেনে নেব না।”রেড রোড থেকে পার্ক সার্কাস পর্যন্ত তাঁদের উপস্থিতি জনগণের মধ্যে উৎসাহ ছড়িয়েছে।একজন স্থানীয় শর্মিলা দে বলেন,-“দিদির সম্প্রীতির বার্তা আমাদের মনে আশা জাগায়।তিনি সত্যিই আমাদের সঙ্গে আছেন।”

মমতা ও অভিষেকের এই বার্তা শুধু ঈদের শুভেচ্ছা নয়, রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটেও গুরুত্বপূর্ণ।বিজেপি ও বামদের বিরুদ্ধে তাঁদের এই আক্রমণ তৃণমূলের অবস্থান আরও স্পষ্ট করেছে।রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে,-মমতা এই উৎসবের মঞ্চ ব্যবহার করে জনগণের মধ্যে একতার বার্তা পৌঁছে দিয়ে বিজেপির বিভাজনের রাজনীতির জবাব দিতে চেয়েছেন।ঈদের এই দিনে রেড রোডের নমাজ থেকে শুরু করে পার্ক সার্কাসের পথে মমতা ও অভিষেকের উপস্থিতি জনগণের কাছে একটি বড় বার্তা বহন করেছে।মুখ্যমন্ত্রীর কথায়,-“আমরা সবাইকে নিয়ে চলব।কেউ যেন ভয় না পায়।”

প্রসঙ্গত,তৃণমূল কংগ্রেসের অন্দরে কৌতূহল ছিল,এবারও কি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর সঙ্গী হবেন।গত কয়েক মাস ধরে দলীয় শীর্ষ নেতৃত্ব নিয়ে জল্পনার মধ্যেই এই প্রশ্ন উঠছিল।বিশেষত,যখন অভিষেক কখনও ‘দূরত্ব’ বজায় রেখেছেন, আবার মমতা স্পষ্ট করে দিয়েছেন তিনিই দলের ‘শেষ কথা’।তবে মুখ্যমন্ত্রীর ইংল্যান্ড সফরের আগে দুই নেতার মধ্যে সম্পর্ক মসৃণ হয়েছে বলে দলীয় সূত্রে জানা গিয়েছিল।যা আরও স্পষ্ট হয়েছিল,-গত ২৭ ফেব্রুয়ারি নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে একই মঞ্চে তাদের উপস্থিতি এবং সম্প্রতি অভিষেকের ভার্চুয়াল বৈঠকে সুব্রত বক্সীর ‘আমাদের সকলের নেতা’ মন্তব্যের মাধ্যমে।এরমধ্যে আবার ঈদের নামাজে একই মঞ্চে মমতা-অভিষেক ধরা দিতেই,দূরত্ব যে পুরোপুরি মিটেছে তা স্পষ্ট।তারমধ্যে আবার এদিন দুজনেই দিলেন সম্প্রীতি রক্ষার বার্তা।এখন এই বার্তা কি বাংলায় শান্তি ও ঐক্য বজায় রাখতে সফল হবে,নাকি রাজনৈতিক উত্তাপ আরও বাড়াবে-সেটাই এখন দেখার।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *