রাজ্য বিজেপিতে ফের একবার তীব্র কোন্দল শুরু হয়েছে, এ বার জগন্নাথ চট্টোপাধ্যায়ের একটি ফেসবুক পোস্ট ঘিরে। ওই পোস্টে, বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর ভাই, বিজেপি নেতা দিব্যেন্দু অধিকারীর নাম এসএসসি নিয়োগ সুপারিশে উল্লেখ করা হয়, যা রাজনৈতিক মহলে চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছে। পোস্টে, রাজ্যের বিভিন্ন নেতার নাম তালিকাবদ্ধ করা হয়, যারা স্কুল সার্ভিস কমিশনে নিয়োগের জন্য সুপারিশ করেছিলেন, আর তালিকার শীর্ষে ছিল দিব্যেন্দু অধিকারীর নাম।এছাড়া, ভারতী ঘোষের নামও পোস্টে উল্লেখ করা হয়, যিনি বর্তমানে বিজেপির নেত্রী। এই পোস্টটি প্রকাশিত হওয়ার পর, বঙ্গ বিজেপির মধ্যে বিতর্কের ঝড় বয়ে যায় এবং জগন্নাথ চট্টোপাধ্যায় সেটি মুছে ফেলতে বাধ্য হন।

এদিকে, শুভেন্দু অধিকারী চরম ক্ষোভ প্রকাশ করেন এবং শনিবার দুপুরেই দিল্লিতে অভিযোগ জানান। কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের চাপের পর, জগন্নাথ ওই পোস্ট মুছে ফেলেন।

প্রসঙ্গত, ২০১৪ সালের প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতির মামলার তদন্ত ঘিরে রাজ্য বিজেপিতে দ্বন্দ্বের আবহ। সেই সময় কোন প্রভাবশালীরা চাকরির জন্য কত জনের নাম সুপারিশ করেছিলেন, তা নথি-সহ আদালতে জমা দিয়েছে সিবিআই।জগন্নাথ সেই পুরো তালিকাটিই ফেসবুকে পোস্ট করে লেখেন,-“এসএসসি নিয়োগ। যোগ্যরা রাস্তায়, অযোগ্যরা সুপারিশে। সেটিং সেটিং বলে যাঁরা চিৎকার করেন তাঁরাই বলুন।”

২০১৪ সালের প্রাথমিক টেটের পরে নিয়োগ প্রক্রিয়া হয়েছিল ২০১৬ সালে। অর্থাৎ সেই সময় তৃণমূলেই ছিলেন দিব্যেন্দু। জগন্নাথ পোস্টের শেষে লেখেন,-“২০১৬ সাল। সকলেই তৃণমূলী সম্পদ। কেউ ছাড় পাবেন না। সময় লাগতে পারে।”শুক্রবার জগন্নাথ ওই পোস্ট করেন, আর শনিবার তাঁকে নোটিস ধরান দিব্যেন্দু। আইনজীবী মারফত নোটিস পাঠান। নোটিসে বলা হয়,-“আপনি (জগন্নাথ চট্টোপাধ্য়ায়) আমার মক্কেলের (দিব্যেন্দু অধিকারী) নাম নিয়ে সোশাল মিডিয়ায় একটি পোস্ট করেছেন এবং শিক্ষক নিয়োগ কেলেঙ্কারিতে তাঁর কথিত জড়িত থাকার দিকে ইঙ্গিত করেছেন। ইচ্ছাকৃতভাবে আমার মক্কেলের (দিব্যেন্দু অধিকারী) সম্মানহানির জন্যই এটা করা হয়েছে।”

নোটিসে আরও বলা হয়,-“আদালতের নজরদারিতে গোটা বিষয়টির তদন্ত করছে সিবিআই। সিবিআই কখনও দিব্য়েন্দু অধিকারীকে সমনও করেনি। দু’ঘণ্টার মধ্যে পোস্টটি মুছে না দিলে আইনি পদক্ষেপ করা হবে।”সেই নোটিস পেয়ে জগন্নাথের ফেসবুক পেজ থেকে পোস্টটি উধাও হয়ে যায়। বিষয়টি সামনে আসতেই শোরগোল পড়ে গিয়েছে। এ প্রসঙ্গে শুভেন্দু বলেন,-“আমি এটা নিয়ে কোনও মন্তব্য করব না। তারা অভিযুক্ত বলে কোনও মন্তব্য করেনি সিবিআই. দিব্যেন্দু কোনও পদাধিকারী নয়। তদন্তকারী সংস্থা তল্লাশি করতে এসে যদি আমার নামে কোনও চিঠি পায়, তার মূল্যায়ন করে দেখে নিয়েছে। এদের ডাকার প্রয়োজনই পড়েনি।”

তমলুকের তৃণমূল সাংসদ ছিলেন দিব্যেন্দু। শুভেন্দু বিজেপি-তে যোগ দেওয়ার পর তৃণমূলের সঙ্গে অধিকারীদের দূরত্ব তৈরি হয়। তবে নিজের পদ ছাড়েননি দিব্যেন্দু। ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের ঠিক আগে বিজেপি-তে যোগ দেন দিব্যেন্দু। আর তাঁকে নিয়েই এবার দ্বন্দ্ব শুরু হল গেরুয়া শিবিরে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *