মেদিনীপুর (Midnapore) সদর মহকুমা ক্রীড়া সংস্থার পরিচালনায় মেদিনীপুর শ্রী অরবিন্দ স্টেডিয়ামে চলছে প্রথম ও দ্বিতীয় ডিভিশন ফুটবল লিগ।আজ দ্বিতীয় ডিভিশন ফুটবল লিগের দুটি খেলা অনুষ্ঠিত হয়।প্রথম খেলায় ম্যান্থন স্পোর্টস বনাম মহতাবপুর যুবক বৃন্দ ক্লাবের ম্যাচটি গোল শূন্য ড্র হয়।কিন্তু দ্বিতীয় ম্যাচটি অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ।আজ লীগের দ্বিতীয় ম্যাচে মাঠে নেমেছিল শহরের অত্যন্ত পরিচিত ও জনপ্রিয় ফুটবল ক্লাব তথা মেদিনীপুরের সাদা কালো ব্রিগেড “মহামেডান স্পোর্টিং ফ্যান ক্লাব,মেদিনীপুর” এবং তাদের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নেমেছিল এম.এস.কে.এফ সিজুয়া।এই ম্যাচের পূর্বে সিজুয়ার ফুটবল ক্লাবটি ২ ম্যাচে ৪ পয়েন্ট নিয়ে এই গ্রুপে শীর্ষে অবস্থান করছিল এবং মেদিনীপুর মহামেডান এর পয়েন্ট ছিল ২ ম্যাচে ৩।এই ম্যাচটি দুই দলের কাছেই মূলতঃ নক আউট ম্যাচ হয়ে দাঁড়িয়েছিল।সেমি ফাইনালে যাওয়ার রাস্তা প্রায় পাকা করতে হলে একদিকে যেমন মেদিনীপুর মহামেডান কে বেশি গোলের ব্যবধানে জিততেই হতো,তেমনি অন্যদিকে সিজুয়ার ফুটবল ক্লাবটি মহামেডান কে হারাতে পারলেই সরাসরি গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়ে প্রথম দল হিসাবে সেমি ফাইনালে চলে যেত।
এইরকম পরিস্থিতিতে ম্যাচের শুরু থেকেই আক্রমণাত্মক নীতি অবলম্বন করে মেদিনীপুরের সাদা কালো ব্রিগেড,ম্যাচের মাত্র ১৩ মিনিটের মধ্যেই দু-দুটি গোল করে এগিয়ে যায়।এরপর এম.এস.কে. এফ সিজুয়া কিছুটা ম্যাচে ফেরে এবং একটি পেনাল্টির মাধ্যমে ম্যাচ ২-২ করে ফেলে।প্রথমার্ধ শেষ হয় ২-২ গোলের ব্যবধানে।
শুরু হয় দ্বিতীয়ার্ধ।দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতে মহামেডান কোচ গৌতম দেব,আতা উদ্দিন,সেক মোহাম্মদ সুরজ প্রমুখদের মোক্ষম চালে খেলার রং পরিবর্তন করে ফেলে মেদিনীপুর মহামেডান,ম্যাচে দুর্দান্ত প্রত্যাবর্তন করে মেদিনীপুরের সাদা কালো বাহিনী।একের পর এক আক্রমণে বিপক্ষকে ক্ষত বিক্ষত করে কর্দমাক্ত মাঠে দ্বিতীয়ার্ধে চার-চারটি গোল তুলে নেয় মহামেডান স্পোর্টিং ফ্যান ক্লাব,মেদিনীপুর।৪৬ বছর বয়সে মাঠে নেমে দুর্দান্ত পারফরম্যান্স করেন মেদিনীপুর মহামেডান এর কোচ কাম লীগে দলের অধিনায়ক সোমনাথ সাহা।এছাড়াও মহামেডান এর হয়ে আজ চোখধাঁধানো গোল করেন প্রথম ম্যাচে হ্যাটট্রিক করা নিশিকান্ত হাঁসদা (২ টি),সেক আশরাফ উদ্দিন (২টি),বিজয় মুর্মু (১ টি) এবং বিমল হেমরম (১ টি)।এছাড়াও অফসাইডের কারণে একটি গোল বাতিল না হলে এবং একাধিক সুযোগ মিস না করলে গোলের ব্যবধান আরও বাড়াতে পারতো মহামেডান।শেষ পর্যন্ত মরণ বাঁচন ম্যাচে গ্রুপের শীর্ষে থাকা দল এম.এস.কে.এফ সিজুয়া কে কার্যতঃ ৬-২ গোলের ব্যবধানে উড়িয়ে দিয়ে সেমি ফাইনালে যাওয়ার রাস্তা প্রায় পাকা করে ফেললো মেদিনীপুরের সাদা কালো ব্রিগেড।
আজ ম্যাচের পর মহামেডান স্পোর্টিং ফ্যান ক্লাব,মেদিনীপুর এর কোচ গৌতম দেব ও দলের অধিনায়ক সোমনাথ সাহা জানান যে-“এই ম্যাচটা আমাদের কাছে মরণ বাঁচণ ম্যাচ হয়ে দাঁড়িয়েছিল।প্রবল বৃষ্টির কারণে এই কর্দমাক্ত মাঠে এইরকম হাই ভোল্টেজ ম্যাচে দলের ছেলেরা আজ ক্লাবের সমর্থকদের যে ফুটবলটা উপহার দিয়েছে তাতে আমরা যথেষ্ট খুশি।এই পারফরম্যান্স ধরে রাখতে পারলে আশা করি আগামীদিনে আমরা শহর তথা জেলার আপামর মহামেডান সমর্থকদের মুখে হাসি ফোটাতে পারবো।”
অন্যদিকে ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক সেক আজহার উদ্দিন ও অর্থ সচিব সেক আরমান জানান যে- “বৃষ্টির কারণে মাঠের অবস্থা খুব একটা ভালো ছিল না,তার ওপর দলের প্রথম একাদশের একাধিক ফুটবলারের চোট ও লীগ টেবিলের অবস্থার নিরিক্ষে এই ম্যাচে আমাদের ওপর একটা মানসিক চাপও ছিল।গ্রুপের শীর্ষে থাকা দলকে ৬-২ গোল হারিয়ে বেশ ভালো লাগছে,তবে এর ফলে আমাদের দল যাতে আত্মতুষ্টি তে না ভোগে সেদিকেও আমাদের লক্ষ্য রয়েছে।বিপক্ষ দলও বেশ ভালো ফুটবল খেলেছে এবং এই জয় টা খুব একটা সহজ ছিল না,কিন্তু আজকের এই জয়ই লীগ টেবিলের অনেক হিসেব নিকেশ বদলে দিল।সব মিলিয়ে দলের ফুটবলারদের পারফরম্যান্স এ আজ আমরা খুশি এবং আশা করি আগামীদিনে মেদিনীপুরের ফুটবলপ্রেমীদের আমরা আরও ভালো ফুটবল উপহার দিতে পারবো।”
উল্লেখ্য যে,আজ মাঠে শহরের মহামেডান ক্লাবের সমর্থকদের ভিড় ও উৎসাহ উদ্দীপনা ছিল চোখে পড়ার মতো। আর সেকারণেই আজকের এই জয়ের পর মহামেডান স্পোর্টিং ফ্যান ক্লাব,মেদিনীপুর এর সাধারণ সম্পাদক সেক আজহার উদ্দিন ও সহ সাধারণ সম্পাদক আব্দুল ওয়াহেদ ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাতে ভোলেননি কলকাতার শতাব্দী প্রাচীন মহামেডান ক্লাবের শহরের তথা এই ফ্যান ক্লাবের সদস্য সমর্থকদের।সেই সঙ্গে উনারা আজকের এই জয় মহামেডান সমর্থকদের উৎসর্গ করেছেন।
মেদিনীপুর জেলা ক্রীড়া সংস্থার সম্মানীয় সম্পাদক তথা এই ফুটবল লীগের অন্যতম প্রধান উদ্যোক্তা সঞ্জীত তোরই জানান যে – “বহুদিন পরে মাঠে খেলা দেখতে আবার অসংখ্য ফুটবলপ্রেমীরা এসে ভিড় জমাচ্ছে দেখে বেশ ভালো লাগছে।সাব ডিভিশন লীগের দ্বিতীয় ডিভিশন এ জেলার মোহনবাগান ও মহামেডান এর ফ্যান ক্লাবেরা অংশগ্রহণ করায় এই লীগের যে গুরুত্ব ও আকর্ষণ পূর্বের তুলনায় অনেকটা বেড়েছে এবিষয়ে কোনও সন্দেহ নেই।সেই সঙ্গে গ্যালারিতে নিজেদের দলের খেলার দিন পতাকা ও বিভিন্ন ব্যানার হাতে মোহনবাগান ও মহামেডান সমর্থকদের উচ্ছ্বাস আমাদের বেশ মুগ্ধ করেছে।”
আরও পড়ুন:Lok Sabha Election:এগিয়ে আসতে পারে চব্বিশের লোকসভা নির্বাচন!