জীবনের দ্বিতীয় বড় পরীক্ষা অর্থাৎ উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা (Higher Secondary Examination) শুরু হতে চলেছে আগামীকাল,মঙ্গলবার থেকেই।তবে সেই পরীক্ষা শুরু হওয়ার আগে একাধিক নির্দেশিকার চাদরে পরীক্ষাকে মুড়ে ফেললো উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদ।জানা গিয়েছে,এবছর মোট পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ৮ লক্ষ ৫২ হাজার।গত বছর পরীক্ষার্থী সংখ্যা ছিল ৭ লক্ষ ৪৫ হাজার।অর্থাৎ গতবারের তুলনায় এক লক্ষ ১০ হাজার পরীক্ষার্থী বেড়েছে।উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদের সভাপতি চিরঞ্জীব ভট্টাচার্য্য জানিয়েছেন,কোনো পরীক্ষার্থী ১২: ৪৫ মিনিটের আগে উত্তরপত্র জমা দিতে পারবেন না।এর পাশাপাশি আরও একটি নিয়ম হল, পরীক্ষার্থীরা পরীক্ষা চলাকালীন প্রথম এক ঘণ্টায় টয়লেটে যেতে পারবে না।মূলত প্রশ্নপত্র ফাঁস হওয়া আটকানোর জন্যই সংসদের পক্ষ থেকে এই ধরনের নির্দেশিকা জারি হয়েছে।

এছাড়াও,সংসদ জানিয়েছে,পরীক্ষা কেন্দ্রে কোনো পরীক্ষার্থী মোবাইল ফোন নিয়ে ঢুকতে পারবেন না।যদি কোনো পরীক্ষার্থীকে মোবাইল ফোন সহ পরীক্ষা কেন্দ্রের ভিতর দেখা যায়,তাহলে শুধু তার পরীক্ষাই বাতিল করা হবে না,বাতিল করা হবে রেজিস্ট্রেশনও।তবে শুধু পরীক্ষার্থীরাই নয়,ভেন্যু সুপারভাইজার,সেন্টার ইনচার্জ,সেন্টার সেক্রেটারি ছাড়া কোনও শিক্ষাকর্মীই ফোন নিয়ে পরীক্ষাকেন্দ্রে ঢুকতে পারবেন না।প্রথমদিন পরীক্ষা শুরুর এক ঘন্টা আগে পরীক্ষা কেন্দ্রে পৌঁছাতে হবে।অন্যান্য দিন অন্তত আধঘণ্টা আগে পৌঁছাতে হবে।পরীক্ষা শুরু হওয়ার অন্ততপক্ষে ১০ মিনিট আগে নিজের আসনে বসে পড়তে হবে।পরীক্ষার্থীরা স্কেল, পেন, পেন্সিল, ইরেজার, সাধারণ ক্যালকুলেটর সঙ্গে রাখতে পারবেন।জানানো হয়েছে,অভিভাবকরা পরীক্ষাকেন্দ্রে ঢুকতে পারবেন না।পরীক্ষকদের বিরুদ্ধে কোনো ধরনের গুরুতর অভিযোগ এলে কড়া পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।পরীক্ষা শুরু হয়ে যাওয়ার পর কোনো শিক্ষক এবং শিক্ষা কর্মী পরীক্ষার হল থেকে বাইরে যেতে পারবেন না।এছাড়াও সমস্ত পরীক্ষাকেন্দ্রে মেটাল ডিটেক্টর থাকবে। পাশাপাশি এই প্রথম পাইলট প্রজেক্ট হিসেবে রেডিও ফ্রিকোয়েন্সি ডিটেক্টর বা আরএডি ব্যবহার করা হবে। শুধু ২০৬টি অতি স্পর্শকাতর পরীক্ষাকেন্দ্রেই নয়, তার থেকে আরও বেশি পরীক্ষাকেন্দ্রে এই ব্যবস্থা করা হবে। ভেনু সুপারভাইজারের কাছে ফরমেট দেওয়া থাকবে। সেই ফরমেটের সই করে প্রশ্নপত্র পরীক্ষক নিয়ে যাবেন। শিক্ষক নিজে চেক করে দেখবেন, পরীক্ষার্থীর কাছে কোনও মোবাইল বা ইলেকট্রনিক্স গেজেট আছে কি না। থাকছেন ১৪০০ জন হেড এগজামিনার। পরীক্ষকের সংখ্যা ৫৫ হাজার। পরীক্ষার্থীরা যেন কোনও গুজবে কান না দেয়, সে বিষয়ে সতর্ক করেন সভাপতি চিরঞ্জীব ভট্টাচার্য।পাশাপাশি সমস্ত পরীক্ষাকেন্দ্রে পরীক্ষার সময় সিসিটিভি ব্যবহারের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে সংসদের তরফে।

শুধু এইসব একাধিক নির্দেশিকা নয়,আরো সংসদের তরফ থেকে আরো জানা যাচ্ছে,এবারে প্রথমবার একটি প্রশ্নপত্র ও একটি উত্তরপত্রে পরীক্ষা দেবেন উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার্থীরা।নতুন এই ব্যবস্থায় উত্তরপত্র আগে থেকেই ছাপানো থাকছে।উত্তরপত্রের প্রথম পৃষ্ঠায় থাকছে এমসিকিউ-এর উত্তর লেখার জন্য নির্ধারিত জায়গা।এবং পরবর্তী দু’টি পৃষ্ঠায় নির্দিষ্ট করে দেওয়া হয়েছে এসএকিউ-এর উত্তর লেখার জন্য।এই বিষয়ে সংসদ সভাপতি বলেন, ”উত্তর যথেষ্ট সংক্ষিপ্তভাবে লিখতে হবে।ঠিক যেটা জিজ্ঞেস করা হয়েছে সেটার উত্তর লিখতে হবে নির্দিষ্ট বক্সে।তাতে একটা বা দু’টো লাইনের বেশি লেখা যাবে না।”উত্তরপত্রের একটি নমুনা দেওয়া রয়েছে সংসদের ওয়েবসাইটে।

পাশাপাশি পরিবহণ দপ্তরের তরফ থেকে উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার দিনগুলিতে বিশেষ বাস চালানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।কলকাতা ও সংলগ্ন শহরতলিতে যে সব রুটে এই বিশেষ বাসগুলি চলবে, তার মধ্যে রয়েছে গড়িয়া, যাদবপুর, টালিগঞ্জ ঠাকুরপুকুর, সরশুনা, ব্যারাকপুর, ডানলপ ও হাওড়া। এই সমস্ত এলাকাগুলির মধ্যে বিভিন্ন রুট দিয়ে একাধিক স্পেশ্যাল বাস চালানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে প্রশাসন। কাঁকুরগাছি, বেহালা, কুঁদঘাট, বিমানবন্দরের মতো এলাকাগুলোতেও উচ্চমাধ্যমিক এবং একাদশ শ্রেণির পরীক্ষার জন্য বিশেষ বাস চলবে।পরিবহণ দপ্তরের তরফে বিজ্ঞপ্তি জারি করে জানানো হয়েছে,পরীক্ষার দিনগুলিতে ১৫ টি রুটে অতিরিক্ত বাস চালানো হবে। যে রুটে ২ টি বাস দেওয়া হবে সেক্ষেত্রে সময় ৭ টা বেজে ৪৫ মিনিট ও ৮ টা বেজে ১৫ মিনিট। একই রুটে পরীক্ষা স্পেশ্যাল বাস পাওয়া যাবে দুপুর সাড়ে বারোটা ও বারোটা বেজে ৪৫ মিনিটে। যে রুটে একটি করে বাস মিলবে সেখানে বাসের সময় সকাল ৮ টা ও দুপুর সাড়ে বারোটা। তালিকা অনুযায়ী দিতে হবে ভাড়া। বিশেষ এই বাসে পরীক্ষা স্পেশ্যাল বোর্ড থাকা আবশ্যক।

এছাড়াও ট্রেনের ক্ষেত্রেও থাকছে বিশেষ ব্যবস্থা।সূত্রের খবর, পরীক্ষার দিনগুলিতে হাওড়া এবং শিয়ালদহ শাখায় একাধিক লোকাল ট্রেন বিশেষ কিছু স্টেশনে থামবে। সেই তালিকায় হাওড়া লাইনের বেলমুড়ি, জনাই এবং শিয়ালদহ লাইনের জগদ্দল, কাঁকিনাড়া, সংহতি হল্টের মতো একাধিক স্টেশন রয়েছে। পরীক্ষার্থীদের সুবিধার জন্য সকাল ৮টা থেকে ১০টা এবং দুপুর ১টা ১৫ মিনিট থেকে ৩টে ১৫ মিনিটের মধ্যে সেই স্পেশ্যাল ট্রেনগুলি নির্দিষ্ট রুটে চলার সময় এমনই বেশ কিছু স্টেশনে দাঁড়াবে।

 

আরো পড়ুন:DA:ডিএ নিয়ে ধর্মঘট!উত্তেজনা সৃষ্টি পূর্ব মেদিনীপুর জেলার এক স্কুলে