বহু দিন ধরে আদালতে বিচারাধীন সারদা মামলা।রাজ্য-রাজনীতিতে বড় কেলেঙ্কারি ছিল এই সারদা।যেই সারদা কাণ্ডে (Sarada Case) প্রতারণার জন্য প্রাণ গেছে বহু সাধারণ মানুষের।এবার সেই সারদার সমস্ত সম্পত্তি নিলামে তুলতে চলেছে ‘সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ বোর্ড অফ ইন্ডিয়া’ (সেবি)। এমনকী তা করতে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে সেবি।জানা গেছে,আগামী ৯ সেপ্টেম্বর ই-অকশনের মাধ্যমে সারদা গ্রুপ অফ কোম্পানিজ এবং তার ডিরেক্টরদের স্থাবর সম্পত্তি নিলামে উঠবে।নিলামে অংশ নিতে ইচ্ছুকরা আবেদনপত্র দাখিল করতে পারবেন ৩ নভেম্বর পর্যন্ত।

কলকাতার ক্যামাক স্ট্রিটে সেবির কার্যালয়ের পক্ষ থেকে এর নির্ধারিত দিনও জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। কলকাতার ক্যামাক স্ট্রিটে সেবির কার্যালয়ের পক্ষ থেকে জারি করা বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, গত ৩০ সেপ্টেম্বরের বিজ্ঞপ্তিতে আবেদনপত্র গ্রহণের শেষ সময় ২৮ অক্টোবর এবং ১ নভেম্বর নিলাম হওয়ার কথা থাকলেও উত্‍সবের মরসুমের প্রেক্ষিতে যাতে আরও বেশি ইচ্ছুক ক্রেতা নিলামে অংশ নিতে পারেন, সে কথা ভেবে আবেদনপত্র জমা দেওয়ার শেষ দিন ও নিলামের দিন পিছিয়ে দেওয়া হয়েছে।

এই প্রেক্ষিতেই সারদায় টাকা রেখে প্রতারিতদের প্রশ্ন, নিলাম তো হবে। কিন্তু নিলামে ওঠা টাকা কি তাঁরা পাবেন? সেবির সাম্প্রতিক বিজ্ঞপ্তিতে অবশ্য তা স্পষ্ট নয়। স্বভাবতই, আইন, আদালত, নিলাম প্রক্রিয়া নিজের গতিতে চললেও, সারদায় টাকা রেখে সর্বস্ব খোয়ানো মানুষের সেটাই একমাত্র চিন্তা।

উল্লেখ্য,সারদা কাণ্ডের উৎপত্তি হয়েছিল ২০১২ সালে।২০১২ সালের মার্চ মাসে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার একটি নির্দেশিকা জারি করে, যাতে বলা হয়েছিল সমস্ত রাজ্য সরকারের অনুদান পোষিত গ্রন্থাগারগুলিতে আটটি ছাড়া সমস্ত সংবাদপত্র রাখা নিষিদ্ধ।যে আটটি সংবাদপত্র কেনা ও প্রদর্শনে উৎসাহ দেওয়া হয়েছিল, তার বেশ কয়েকটি সারদা সংস্থার।সারদা তখন রমরমিয়ে। আর এক বছর পরেই মুখ থুবড়ে পড়বে এই পঞ্জি প্রকল্প।সারদা কাণ্ডে সুদীপ্ত সেন গ্রেফতার হবার পর, গোটা সারদা প্রকল্প মুখ থুবড়ে পড়ার পর, দেরাজ থেকে কঙ্কালের মত বেরিয়ে আসতে থাকে তৃণমূল কংগ্রেসের সঙ্গে সারদার যোগ।

নাম জডায়নি, এমন কোনও নেতার সংখ্যা হাতে গোণা। আর সারা রাজ্য জুড়ে অসংখ্য তৃণমূলের ছোট-বড় নেতা কর্মীরা যে এই পঞ্জি স্কিমের সঙ্গে জড়িত ছিলেন, তাও প্রকাশ্য হতে থাকে।এদিকে যেখানে এইভাবে একের পর এক সারদা কাণ্ডে নেতার যোগ পাওয়া যাচ্ছিল।ঠিক তখনই একের পর এক মানুষ প্রতারিত হয়ে নিজেদের জীবন শেষ করেছিল।

দীর্ঘ দিন হল সারদা মামলা চলছে আদালতে। সর্বশেষ, কলকাতা হাইকোর্ট সারদার মামলা পাঠিয়েছিল অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি শৈলেন্দ্রপ্রসাদ তালুকদারের কমিটির হাতে। আবেদনকারী পক্ষের আইনজীবী অরিন্দম দাস জানিয়েছিলেন, সিবিআই, ইডি, রাজ্য সরকার-সহ বিভিন্ন সংস্থার হেফাজতে সারদার যত টাকা ও সম্পত্তি আছে, সে সব তালুকদার কমিটির হাতে তুলে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে হাই কোর্ট।

মূলত,এর আগে সারদা মামলায় ৫০০ কোটির তহবিল গড়ার কথা ঘোষণা করেছিল রাজ্য সরকার। অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি শ্যামল সেনের কমিশনের কাছে রাজ্য ২৮৭ কোটি টাকা প্রতারিত আমানতকারীদের ক্ষতিপূরণ বাবদ দেওয়ার জন্য দিয়েছিল। আমানতকারীদের আর এক আইনজীবী শুভাশিস চক্রবর্তী হাই কোর্টকে জানিয়েছিলেন, ওই তহবিলে ১৪০ কোটি টাকা এখনও পড়ে রয়েছে।

প্রসঙ্গত, সারদা-সহ ৮৬টি বেআইনি অর্থলগ্নি সংস্থার কার্যকলাপ তদন্তের জন্য শ্যামল সেন কমিশনকে দায়িত্ব দিয়েছিল রাজ্য সরকার সরকার। কমিশনের কাজের পরিধি ঠিক করতে ছ’টি বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়। ২০১৪-র ২৩ এপ্রিল কমিশন চালু হওয়ার পর থেকে টাকা ফেরত চেয়ে আবেদন জানান সাড়ে ১৭ লক্ষ আমানতকারী। সূত্রের খবর, এঁদের মধ্যে ৩ লক্ষ ৯০ হাজার জনকে চেক বিলি করেছিল কমিশন। নানা কারণে আমানতকারীদের দিতে পারেনি বলে ১০২ কোটি টাকা রাজ্যকে ফিরিয়ে দেয় কমিশন।এখন এইটাই দেখার সাধারণ মানুষ সুবিচার পায় নাকি।তারা এই প্রতারণার ফাঁদের স্বীকার থেকে মুক্ত হতে পারে নাকি।

 

আরো পড়ুন:Dilip Ghosh:’সব দুষ্কৃতী তৃণমূলের নেতা হয়ে গিয়ে কাটমানি খাচ্ছে’ নৈহাটিকান্ডে বিস্ফোরক দিলীপ!