কথায় বলে আত্মহত্যার মতো বড়ো পাপ হয়না। কিন্তু মনের পরিবর্তন হওয়া তো কেবল সেকেন্ডের অপেক্ষা! আর এইরকমই এক আত্মহত্যার স্বীকার হল দ্বাদশ শ্রেণীর পড়ুয়া সোমনাথ সাহা।
বিছানার চারিদিকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে বই-খাতা৷ সেখানেই হেলান দিয়ে রাখা একটি হোয়াইট বোর্ড৷ তার সামনে রাখা একটি বড় হেডফোন৷ সাদা বোর্ডে ধাপে ধাপে অষ্ক কষা৷ তার ঠিক নিচেই ইংরেজি হরফে লেখা ‘মা আই ক্যুইট’৷ লেখার নীচে আঁকা একটি স্মাইলি৷ সময় আড়াইটে৷ ঘর থেকে ঠিক এই অবস্থাতেই উদ্ধার হয় সোমনাথের ঝুলন্ত দেহ৷ এই ঘটনায় এলাকায় তীব্র চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়ে৷ কেন আত্মঘাতী হল মেধাবী ছাত্র সোমনাথ? মানসিক চাপ, নাকি অন্য কিছু? আত্মহত্যার কারণ ঘিরে তীব্র জল্পনা। (Siliguri)
শিলিগুড়ির (Siliguri) জ্যোতিনগরের বাসিন্দা দ্বাদশের এই পড়ুয়া৷ পড়াশোনায় ছোট থেকেই মেধাবী সে৷ শিলিগুড়ি (Siliguri) বয়েজ স্কুলের বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র। এককথায়, সে ছিল অঙ্ক পাগল৷ পরিবার সূত্রে খবর, অঙ্ক কষা আর পড়াশোনা নিয়েই দিন কাটত তার৷ মাধ্যমিকে ৯৩ শতাংশ নম্বর পেয়ে পাশ করেছিল সে৷ পদার্থবিদ্যা নিয়ে হায়ার স্টাডিজ করার ইচ্ছে ছিল তার৷ পরবর্তীতে অ্যস্ট্রোনমি নিয়ে পড়ার ইচ্ছা ছিল সোমনাথের৷ সেই স্বপ্ন আর পূরণ হল না৷ মঙ্গলবারের অভিশপ্ত দুপুর এক ঝলকে বদলে দিল সমস্তটা।
সূত্রের খবর, সোমনাথের বাবা জানান, আর পাঁচটা দিনের মতোই মঙ্গলবার স্বাভাবিক ছিল সে৷ কোনও অস্বাভাবিকতা বা অস্থিরতা তার মধ্যে দেখা যায়নি৷ দুপুর বেলা একসঙ্গে খাওয়া দাওয়াও করেন তারা৷ এর পর নিজের ঘরে চলে যায় সোমনাথ৷ দুপুরবেলা পড়াশোনাই করছিল সে৷ এর পর আর কিছু জানা নেই তাঁর৷ বিকেলে সোমনাথের ঠাকুমা নাতিকে ডাকতে এসে দেখেন সিলিং ফ্যানের সঙ্গে ঝুলছে তার দেহ৷ ঠাকুমার চিৎকারেই ছুটে আসেন সোমনাথের বাবা-মা৷ কিন্তু ততক্ষণে সব শেষ৷ (Siliguri)
সোমনাথ তার রুমে থাকা বোর্ডেই লিখে যায় ‘মা আই ক্যুইট’৷ সেই সঙ্গে একটা স্মাইলির ছবি৷ সঙ্গে লেখা সময়, ২ টো ৩০৷ কিন্তু প্রশ্ন হল কেন এই চরম পদক্ষেপ? সোমনাথের বন্ধুদের কথায়, অঙ্ক কষতে দারুণ ভালোবাসত সোমনাথ৷ কিন্তু অঙ্ক না মিললেই সে বিরক্ত হয়ে পড়ত৷ সম্প্রতি সব প্রাইভেট টিউটর ছাড়িয়ে দেওয়ার কথাও বলেছিল৷ তবে কি কোনও রকম মানসিক অবসাদে ভুগছিল সে?
সেইদিনই পুলিশ এসে তার দেহ উদ্ধার করে। এবং উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজে ময়নাতদন্তের জন্য নিয়ে যায়৷ বুধবার দুপুরে নিয়ে আসা হয় তার মরদেহ৷ বন্ধুরা বলছে, ছোট ছোট বিষয় নিয়ে দুশ্চিন্তা করত সোমনাথ৷ কিন্তু তা বলে এই চরম পদক্ষেপ কেন? সেই উত্তরই খুঁজছে সোমনাথের পরিবার৷ আর এই ঘটনায় রীতিমতো বিস্মিত মনোবিদরাও৷ (Siliguri)