সংসার চালাতে বাধ্য হয়ে মানসিক ভারসাম্যহীন ছেলে মেয়েকে বাড়ির উঠানে পায়ে শিকল বেঁধে রেখে দিনযান,মর্মান্তিক ছবি দাসপুরের অসহায় রায় পরিবারে
পাড়ার অন্য ছেলেরা যখন খেলাধুলায় মগ্ন,ছোট্ট কৌশিকের পা তখন লোহার শক্ত শিকলে তালা দেওয়া। পাশে দাঁড়িয়ে দিদি,মুখ দিয়ে লালা গড়িয়ে পড়ছে। দিদিকেও শিকলে বেঁধে রাখতে হয়।শৈশবে শিশুর খেলাধুলার অধিকার তো দূর,চরম আর্থিক দুরবস্থা,দুবেলা দুমুঠো খাবারটুকুও জোটে না। হতদরিদ্র মা ভাগ্যের নিষ্ঠুরতার সাথে লড়েও আজ ভেঙে পড়েছেন।চোখের জল মুছে বাধ্য হচ্ছেন নিজের সন্তানদের শক্ত শিকলে বেঁধে রাখতে।স্নান খাওয়া দাওয়ার সময়টুকু ছাড়া সারাদিন শিকলে বাঁধা জীবন পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার দাসপুরের হরিরামপুরের সোমা রায় ও অভিজিত রায়ের দুই সন্তান বছর ৮ এর কৌশিক আর কৌশিকের দিদি বছর ১৪ র কাঞ্চনার।মা সোমা দেবী বলেন,কাঞ্চনা তাঁদের প্রথম সন্তান।বয়স বাড়তে দেখা যায় মেয়ে মানসিক ভারসাম্যহীন, সাথে কথা টুকুও বলতে পারে না।অনেক ডাক্তারের কাছে গিয়েও সুরাহা মেলেনি।আসে দ্বিতীয় সন্তান কৌশিক।বয়স বাড়ার সাথে ক্রমশ একই অবস্থা কৌশিকেরও।মুখে নেই কথা,সাথে মানসিকভাবে ভারসাম্যহীন।দুই সন্তানকে সুস্থ জীবন ফিরিয়ে দিতে বাবা মা শেষ পুঁজিটুকুও খরচ করে একের পর এক ডাক্তারের কাছে ছুটে গিয়েছেন।হাজার হাজার টাকার পরীক্ষার শেষে ডাক্তাররাও জবাব দিয়ে দিয়েছেন।কৌশিকের বয়স এখন ৯ বছর।বয়সের সাথে দৌরাত্ম্য বেড়েছে ছেলের। পাড়ার অন্য ছেলেমেয়েদের সঙ্গে মারামারি থেকে পুকুরে নেমে পড়া,জ্বলন্ত আগুনে পড়ে যাওয়ার মতো একাধিক ঘটনা ঘটিয়ে ফেলছে সে।ছেলের জন্য মাকে পাড়া পড়শিদের গঞ্জনা শুনতে হচ্ছে নিত্যদিন।শুধু ছেলে নয় মাঝে মধ্যেই বিগড়ে যায় মেয়ে কাঞ্চনাও।অগত্যা দুজনকেই নিয়মিতভাবে এখন শিকলে বেঁধে তালা ঝুলিয়ে রাখতে হয়।একদিকে অসহায় মা অন্যদিকে শিকলের জাঁতা কলের মধ্যে ছটফট করা অবুঝ শৈশব।
রোজগার বলতে সোমা দেবীর একশোদিনের কাজ,তাও অন্যের জব কার্ডে।আর স্বামী অভিজিৎ ট্রলি চালান সাথে পুজো বা বিয়ে বাড়িতে বাজনার দলে চুড়চুড়ি বাজান।সরকারি সহযোগিতা বলতে মেয়ে কাঞ্চনার মাসখানেক আগে শুরু হওয়া মাসিক ভাতা।ছেলে কৌশিকের কোনো ব্যবস্থা হয়নি।স্থানীয় বাসিন্দা ও পার্শ্ব শিক্ষক তাপস মাজী এলাকার বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশুদের নাম নথিভুক্তিকরণের কাজ করেন।তিনি জানান,অত্যন্ত দুরবস্থার মধ্যে দিন কাটাচ্ছে ওই পরিবার।সরকারি সহযোগিতা অত্যন্ত জরুরী। আধুনিক পদ্ধতিতে চিকিৎসার পাশাপাশি,পাঠদানের মাধ্যমেও এই সমস্ত শিশুদের সমাজের মূল স্রোতে ফেরানো অনেকক্ষেত্রে সম্ভব হচ্ছে। তিনি ইতিমধ্যেই বিষয়টি তাঁর ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের দৃষ্টিতে এনেছেন।এখন দেখার কৌশিক-কাঞ্চনা কবে শিকল ভেঙে পাড়ার অন্যদের সাথে মাঠে খেলতে নামে,আর পড়াশোনার জগতে পা দিয়ে দিতে পারে।বৃহস্পতিবার সকালে ওই পরিবারের সাথে দেখা করে সব রকমের প্রতিশ্রুতির আশ্বাস দেওয়া হয় প্রশাসনের তরফে।