‘বুড়িমার চকলেট বোম’ ছাড়া কালীপূজা অসম্পূর্ণ!জানেন, ‘বুড়িমার চকলেট বোম’-এর ‘বুড়িমা’ আসলে কে? কীভাবে জন্ম হলো বুড়িমার এই আতশবাজির?
সামনেই কালীপুজো! আর বাঙালির কালীপুজো মানেই, একরাশ বাজির মেলা। এই কালীপুজোর রাতে সকলেই নানারকম বাজি নিয়ে আনন্দে মেতে ওঠেন। এক একটি বাজির নাম একেক রকম। তবে বাজির কথা বললেই সবার আগে মনে পড়ে যায় একটাই নাম, সেটা হল বুড়িমা-র চকলেট বোম! যার জনপ্রিয়তা একেবারে আকাশছোঁয়া। কিন্তু জানেন কী, এই বুড়িমার নামে বোমের নামকরণের পিছনে লুকিয়ে আছে একটা লম্বা কাহিনী? জানেন, কে এই বোমার বুড়িমা?
বুড়িমা নামে পরিচিত এই সফল মহিলার আসল নাম, অন্নপূর্ণা দাস। তবে লোকমুখে তিনি ‘বুড়িমা’ নামেই পরিচিত। তার আদি বাড়ি বাংলাদেশের ফরিদপুরে। তবে, ১৯৪৮ সালে দেশভাগের পর স্বামী-সন্তানদের নিয়ে উত্তর দিনাজপুর জেলার ধলদিঘির সরকারি ক্যাম্পে আশ্রয় নেন তিনি। এরপর একদিন ছেলে-মেয়েরা ছোট থাকতেই মৃত্যু হয় তাঁর স্বামী সুরেন্দ্রনাথ দাসের। শাকসব্জি, ঘটিবাটি যা পারেন, তাই বেচে কোনোরকমে সংসার চালাতে শুরু করেন অন্নপূর্ণা। এমনকি, অভুক্ত-ও থেকেছেন অধিকাংশ সময়। কঠিন জীবনের লড়াই সামলাতে একসময় ধলদিঘি থেকে গঙ্গারামপুরে চলে যান তিনি। সেখানে গিয়ে বিড়ি বাঁধা শেখেন সনাতন মন্ডলের কাছে এবং আস্তে আস্তে গড়ে তোলেন ছোট একটি বিড়ি বাঁধার কারখানা।
এই সবের মধ্যেই তিনি তার মেয়ের বিয়ে দেন হুগলীর বেলুড়ে। সেই সূত্রে মেয়ে-জামাইয়ের কাছে এসে হরকুসুম গাঙ্গুলির কাছ থেকে তিনি শেখেন আলতা-সিঁদুর বানানোর কাজ। আস্তে আস্তে অন্নপূর্ণা আলতা-সিঁদুর ব্র্যান্ডও তৈরি হল। তারপর একবার কালীপুজোয় তিনি ঠিক করলেন, বাজির ব্যবসা করবেন। যেমন ভাবা, তেমন কাজ! বাজি কিনে এনে দোকান সাজালেন। কিন্তু, সেই সময় বাজি বিক্রির অনুমতি ছিল না, তাই তার দোকান ভেঙে দিয়েছিল পুলিশ। কিন্তু হার না মেনে, কিছু দিনের মধ্যেই তিনি জোগাড় করে ফেলেন অনুমতিপত্র। তবে, বাজি কিনে বিক্রি করতে গিয়ে অনেকটা-ই টাকা খরচ হয়ে যাচ্ছিল তার। তাই তখন তিনি ঠিক করেন যে, তিনি নিজেই বাজি তৈরি করবেন। কিন্তু, বাজি তৈরি শেখাবে কে? তখন অন্নপূর্ণাদেবীর সঙ্গে আলাপ হয় বাঁকুড়ার আকবর আলির এবং তিনিই তাকে বাজি তৈরির কৌশল শিখিয়েছিলেন। একটু একটু করে সব কিছুই শিখে ফেলেছিলেন অন্নপূর্ণাদেবী। আর তাতেই বাজিমাত! আর এভাবেই যাত্রা শুরু হয়েছিল ব্র্যান্ড ‘বুড়িমা’-র।